সুদর্শন তিনরঙা মুনিয়া

রাজশাহী শহরের পদ্মার তীরে সিমলা পার্কের পাশের কাউন খেতে তিনরঙা মুনিয়া l মো. মারুফ রানা
রাজশাহী শহরের পদ্মার তীরে সিমলা পার্কের পাশের কাউন খেতে তিনরঙা মুনিয়া l মো. মারুফ রানা

ছোটবেলায় পাখি পোষার খুব শখ ছিল। খালাতো ভাই মাহি রংবেরঙের আটটি মুনিয়া এনে দিয়েছিল। আটটির মধ্যে ছয়টি তিলা মুনিয়া, বাকি দুটির মাথা কালো, পিঠ খয়েরি, বুক সাদা-কালো। একদিন সকালে খাঁচার কাছে গিয়ে আঁতকে উঠলাম। আটটি পাখির মধ্যে তিনটি মৃত ও তিনটি রক্তাক্ত! কিছুক্ষণ পর রক্তাক্ত তিনটি পাখিও মারা গেল। বাবা-মা বললেন, এটা সম্ভবত ইঁদুরের কাজ। জীবিত দুটির মধ্যে পরে একটি মারা গেল। বেঁচে থাকা কালো-খয়েরি-সাদা মুনিয়াটিকে একদিন নীল আকাশে উড়িয়ে দিলাম। আজও খাঁচাবন্দী কোনো মুনিয়া দেখলে সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে। বনের পাখিকে খাঁচায় বন্দী করা সহ্য হয় না।

সেদিনের উড়িয়ে দেওয়া মুনিয়াটি এ দেশের আবাসিক পাখি তিনরঙা মুনিয়া। খয়েরি মুনিয়া নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Tricolored Munia, Three-colored Munia Black-headed Munia। একসময় এরা কালোমাথা মুনিয়া নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এরা দুটি আলাদা প্রজাতিতে ভাগ হয়ে গেছে; খয়েরি বা তিনরঙা মুনিয়া ও তামাটে বা কালোমাথা মুনিয়া (Chestnut Munia)। Estrildae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Lonchura malacca

তিনরঙা মুনিয়া লম্বায় প্রায় ১১ সেন্টিমিটার এবং ওজনে মাত্র ১২ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, ঘাড়, গলা, বুকের কেন্দ্র, অবসারণী ও লেজের তলা চকচকে কালো। বুকের বাকি অংশ সাদা। ডানা, পিঠ ও লেজ লালচে-বাদামি বা খয়েরি। ঠোঁট বেশ শক্ত, ত্রিকোণাকার ও হালকা নীলচে। পা, আঙুল ও নখ কালো।

তিনরঙা মুনিয়া লম্বা ঘাসবন, জলা, ধান‌খেত ও ছোট ঝোপে বিচরণ করে। মুনিয়ারা ছোট থেকে বড় মিশ্র ঝাঁকে থাকে। কখনো কখনো ডোরা বাবুই এবং কালোবুক বাবুইয়ের সঙ্গেও চরতে দেখা যায়। ঘাসবীচি, কাউন, ধান ইত্যাদি প্রিয় খাদ্য। ঘাসবন বা ধান-কাউনের খেতে দলে দলে খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়। এমনিতে নিরীহ হলেও ঝাঁক বেঁধে ফসলের বেশ ক্ষতি করে।

মে-নভেম্বর প্রজননকাল। এ সময় জলার ধারে পাতা ও ঘাস দিয়ে বড় বলের মতো বাসা বানায়। বাসায় ঢোকার জন্য লম্বা সুড়ঙ্গের মতো পথ থাকে, ঘাসফুল দিয়ে যার চারপাশটা মুড়ে নেয়। ডিম পাড়ে চার থেকে সাতটি, ধবধবে সাদা। স্বামী-স্ত্রী মিলে ১২-১৩ দিন তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চারা ১৪-১৫ দিনে উড়তে শেখে। সুন্দর এই পাখিগুলোকে দয়া করে কেউ খাঁচাবন্দী করবেন না।