সুনামগঞ্জে হাওরবেষ্টিত ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর বাজার। বর্ষাকালে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় এই বাজার থেকে লাখ লাখ মণ ধান দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এ বছর এক কেজি ধানও কোথাও সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। কারণ, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরের একমাত্র ফসল বোরো নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ধান কেনার জন্য কৃষক ও খুচরা ধানের ব্যবসায়ীদের অগ্রিম কোটি কোটি টাকা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন বাজারের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী।
মধ্যনগর বাজারের আড়তদার কল্যাণ সমিতির কয়েকজন সদস্য জানান, উপজেলার মধ্যনগর বাজারটি সোমেশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত। এই বাজারে ৬০-৭০টি আড়ত রয়েছে। এর মধ্যে কারও নিজস্ব আড়ত আবার কারও ভাড়াটে আড়তঘর রয়েছে। প্রতিবছর চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে ওই আড়তগুলোতে কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ধান নিয়ে আসতে শুরু করেন। এখানে কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ধান কেনাবেচা চলে। ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ধান কিনে ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা ও কার্গো দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।
গত শনিবার বেলা তিনটার দিকে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাজারের ধানের আড়তদারদের বেশির ভাগ আড়তঘরেই তালা ঝুলছে। হাতে গোনা কয়েকটি আড়ত খোলা থাকলেও, সেখানে এক কেজি ধানও চোখে পড়েনি।
বাজারের ব্যবসায়ী বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমি এক বছরের জন্য ২ লাখ টাকা দুইডা ঘর ভাড়া নিছি। বান ভাইঙ্গা আওরের বেক ধান তল অইয়া গ্যাছে। আমার আড়ত ধান দেওয়ার লাইগ্যা বেশ কয়েকজন কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে ১২ লাখ টাকা দিয়া রাখছি। ফসল ডুবছে, তাই এক টাকা পাওয়ার কোনো আশা নাই।’
মধ্যনগর বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি জহিরুল হক বলেন, ‘এই বাজার থেকে প্রতিবছর ১ লাখ ৬০ হাজার টন ধান আশুগঞ্জ, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, ধামরাইল, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী ও মিল মালিকেরা কিনে নিয়ে যান। আমি নিজে বেশ কয়েকজন কৃষক ও খুচরা ধান ব্যবসায়ীর কাছে তিন মাস আগে ২৫ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে রেখেছিলাম। নিজের জমির ধান পানিত ডুবছে। পাওনা টেহাতো ইবার পাইতামই না। ইবার এক কেজি ধান আড়ত উঠতনা। এখানকার মানুষ কী খাইয়া বাঁচব, হেই চিন্তায় আছি।’
মধ্যনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন, মধ্যনগর বাজারটি জেলার মধ্যে ধান কেনাবেচার দিক থেকে সর্ববৃহৎ বাজার হিসেবে পরিচিত। হাওরের একমাত্র ফসল হারিয়ে কৃষক যেমন বিপাকে পড়েছে, তেমনি আড়তদারেরাও (ব্যবসায়ীরা) কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ধানের জন্য আগাম টাকা দিয়ে বিপদে পড়েছেন।