সুপ্রিম কোর্টের নতুন ভবন নিয়ে অসন্তোষ

আইনজীবীরা বলছেন, আদালত ভবনের যে ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত, নতুন ভবনে তা নেই।

সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত বহুতল ভবন ‘বিজয়–৭১’। গত ২৫ মে তোলা ছবি
প্রথম আলো

সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত বহুতল ভবন ‘বিজয়–৭১’ এর স্থাপত্যশৈলী, এজলাসের আকার–আকৃতি এবং অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা নিয়ে আইনজীবীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভবনটি আদালত ভবনের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, আইনজীবীদের কেউ কেউ এমন অভিযোগ করে সেখান থেকে এজলাস সরিয়ে নেওয়ারও দাবি জানান।

গত ২৫ মে বেলা ১১টার দিকে বিজয়–৭১ ভবনে গিয়ে দেখা যায়, আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত পাশাপাশি দুটি লিফটের সামনে লম্বা লাইন। সেখানে উপস্থিত চার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন কয়েক হাজার আইনজীবী এই ভবনে যাতায়াত ও লিফট ব্যবহার করেন। ব্যবহারকারীর তুলনায় লিফটের সংখ্যা অপ্রতুল। যে দুটি লিফট আছে, সেগুলোর ধারণক্ষমতাও কম। ফলে আদালত চলাকালে প্রায়ই লিফটের জন্য তাঁদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়া ভবনের ভেতরে চলাচল ও এজলাস খুঁজে পাওয়ার সমস্যার কথাও জানান তাঁরা।

বিজয়–৭১ ভবন নিয়ে এসসিবিএ (সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন) সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, আদালত ভবন ও প্রশাসনিক ভবনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই ভবন প্রশাসনিক ভবনের মতো হয়েছে। এ ভবনে বিচারপতি ও আইনজীবীদের চলাফেরার উপযুক্ত পরিবেশ নেই।

‘বিজয়-৭১’ ভবন থেকে এজলাস সরানোর দাবিতে টানানো ব্যানার। গত ১৮ মে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে
প্রথম আলো

গত ৩ মে বিজয়-৭১ ভবন পরিদর্শন করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ সময় তাঁরা ভবনের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের অসুবিধাগুলো দূর করতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তাঁদের সঙ্গে ভবন নির্মাণকাজের প্রধান স্থপতি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা ছিলেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রী চলাচলের সুবিধার্থে নতুন ভবনে পর্যাপ্ত লিফটের ব্যবস্থা করা এবং আইনজীবী সমিতি ভবন থেকে একটি সংযোগ সেতু তৈরির বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুন নূর সাংবাদিকদের জানান, ‘প্রধান বিচারপতি এবং আইনমন্ত্রী বিজয়–৭১ ভবন পরিদর্শন করে সমস্যাগুলো নিজ চোখে দেখেছেন। আশা করি, এসব সমস্যার একটি সুন্দর সমাধান হবে।’

তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সংযাগ সেতু ও লিফটের ব্যবস্থা করলেই ভবনটির সমস্যা দূর হবে না। আদালত ভবনের যে ধরনের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত, এ ভবনে তা নেই। সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন ও এনেক্স ভবনের তুলনায় এজলাস কক্ষ আকারে ছোট। সেখানে আইনজীবীদের বসার এবং ফাইলপত্র রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাই তাঁরা নতুন ভবন থেকে এজলাস সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, দলীয় বিবেচনায় সরকার সমর্থক আইনজীবী নেতারা বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য করছেন না। কিন্তু এত টাকা ব্যয় করে কীভাবে এ রকম একটি ভবন নির্মাণ করা হলো, তা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।

আইনজীবীদের অভিযোগ সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (অর্থ ও উন্নয়ন) এস কে এম তোফায়েল হাসানের সঙ্গে গত বুধবার (২৫ মে) তাঁর দপ্তরে কথা হয়। তিনি বলেন, ভবনের স্থাপত্যশৈলী নিয়ে আইনজীবীরা যে অভিযোগ করেছেন, সেটি একটি কারিগরি বিষয়। এটা নিয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। ভবনটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাদের সমস্যাগুলো জানানো হয়েছে।

২০১৮ সালের ৪ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সুপ্রিম কোর্টের জন্য ১২ তলা নতুন ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিল। এনেক্স ভবনের পশ্চিম পাশে ১৮ হাজার ১৩৪ বর্গমিটার জায়গায় ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫৮ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার টাকা। এ ভবনে ৩২টি এজলাস কক্ষ, বিচারপতিদের জন্য ৫৬টি চেম্বার এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দাপ্তরিক কক্ষ রয়েছে। গত ৩১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চু৵য়ালি যুক্ত হয়ে এ ভবন উদ্বোধন করেন।