সেতুর অভাবে পাঁচ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের বাঁশগাড়া ও লাছীপাড়া গ্রামে লাছী নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের বাঁশগাড়া ও লাছীপাড়া গ্রামে লাছী নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বাঁশগাড়া ও লাছীপাড়া গ্রামের লাছী নদীর ওপর সেতু না থাকায় আশপাশের পাঁছ-ছয় গ্রামের মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ফলে ওই নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় লোকজন চলাচল করছে। এতে মাঝেমধ্যে সাঁকো থেকে পড়ে অনেকে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেেছ, ১৪-১৫ বছর ধরে স্থানীয় লোকজন ওই নদীর ওপর সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছে। ওই সাঁকো দিয়েই চাপোড়, মসলন্দপুর, ফুটকিবাড়ী, পূর্ব-পশ্চিম লাছীপাড়া ও বাঁশগাড়া গ্রামের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির মানুষ যাতায়াত করছে।
পীরগঞ্জ মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী পূর্ব লাছীপাড়ার রুমা আকতার বলে, ‘বাঁশের সাঁকোর মাঝখানের মাচাটি অনেকটা ভেঙে দক্ষিণ দিকে হেলে গেছে। সাঁকোর ওপর উঠলেই গা ছমছম করে। আমরা খুবই সাবধানে ওই সাঁকো পার হয়ে কলেজে যাই। প্রশাসনের কাছে আমরা ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানাই।’
গুয়াগাঁও মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রী মিরা আকতার বলে, ‘পূর্বপাড়ার ৫০-৫৫ জনসহ লাছীপাড়ার দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে বাঁশগাড়াসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে। আমি সাঁকো পার হওয়ার সময় দুবার বইসহ নদীতে পড়ে গিয়েছিলাম। আরও কয়েকজন পড়েছে ওখানে।’
বাঁশগাড়া পূর্ব-পশ্চিম লাছীপাড়ার কৃষিশ্রমিক সমেলা বেগম, রুখসানা বেগম, আবদুল গফুরসহ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এ বছর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের আগে মার্চে ইউপি চেয়ারম্যান সনাতন চন্দ্র রায় ৮০ হাজার টাকায় তিনজন মিস্ত্রির মজুিরসহ রড-সিমেন্ট-ইট-খোয়া কিনে দেন। মিস্ত্রিদের সহায়তা করেন পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ার হেলালউদ্দীন, আবদুল গফুর, দয়াল, খাদিম আলী, ভুট্টুসহ ১৫-১৬ জন বাসিন্দা। দেড় সপ্তাহে আটটি আরসিসি খুঁটির প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হতেই চেয়ারম্যানের দেওয়া রড-সিমেন্ট ফুরিয়ে যায়। এদিকে নির্বাচনেও সনাতন চন্দ্র হেরে যান। পরে গ্রামবাসী বাঁশ ও টাকা সংগ্রহ করে আগের বাঁশের সাঁকোটি মেরামত করে আরসিসি খুঁটির ওপর স্থাপন করে। এখন এর ওপর দিয়েই তারা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে।
সনাতন চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেখানে সেতু তৈরির জন্য নিজের পকেট থেকে তিনজন মিস্ত্রির মজুিরসহ ৮০ হাজার টাকার রড-সিমেন্ট-খোয়া কিনে দিয়েছি। সেখানে সেতু করতে ১৫-২০ লাখ টাকা দরকার।’
দৌলতপুর ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কার্তিক চন্দ্র রায় বলেন, ‘ওই বাঁশের সাঁকোর জায়গায় একটি সেতু নির্মাণ করা জরুির। আমি এ ব্যাপারে চেষ্টা করব।’
উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সরেজমিনে দেখে সেখানে একটি সেতু নির্মাণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’