সৌদি আরব যাওয়ার খরচ ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা

সৌদি আরবে কর্মী যাওয়ার জনপ্রতি খরচ ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এর বেশি টাকা নেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এদিকে সৌদি আরব বলেছে, কারও বিরুদ্ধে ভিসা কেনাবেচার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১৫ বছর কারাদণ্ড হবে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, পাঠানোর খরচ নিয়ন্ত্রণ করে সবকিছু নিয়মমাফিক করতে পারলে ২০১৭ সালের মধ্যেই তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে সৌদি আরবে। তাঁদের বেশির ভাগই কৃষি, মৎস্য ও নির্মাণ খাতে কাজ পাবেন।
জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টির নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা গতকাল সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি সৌদি আরব বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সব খাত উন্মুক্ত করেছে। এরপর সরকার সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর খরচ নির্ধারণের জন্য জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই এখন ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ এই টাকার বেশি নিলে বা দাবি করলে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ মানুষের প্রতিও এর বেশি টাকা না দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, ছয় বছর বন্ধ রাখার পর ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সৌদি আরব। তবে গত দেড় বছর নারী গৃহকর্মীদের পাশাপাশি শুধু গৃহখাতের শ্রমিক নেয় দেশটি। কিন্তু ১১ আগস্ট সব ধরনের কর্মী নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটির শ্রম ও সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। এরপর সৌদি আরব থেকে পুরুষ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্রও আসতে শুরু করে। তবে সৌদি আরবে কর্মী যাওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতো বলে অভিযোগ আছে। তাই নতুন করে বাজার চালুর আগেই খরচ নির্ধারণের বিষয়টি উঠে আসে। এরপর সরকার এ নিয়ে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে।
সূত্র বলেছে, অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ তোলার জন্য বাংলাদেশি কর্মীরা চাকরি বদল করেন, মেয়াদের অতিরিক্ত সময় অবস্থান করে অবৈধ হয়ে পড়েন।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, সপ্তাহ খানেক আগে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ ঢাকায় আসেন। তিনিসহ প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিএমইটির মহাপরিচালক গত সোমবার জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) নেতাসহ সৌদি আরবে যাঁরা কর্মী পাঠান, তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে গোলাম মসিহ বলেন, সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য বিপুল অর্থ খরচ হয়। সৌদি সরকার বলেছে, এটি নিয়ন্ত্রণ না করলে আবার বাজার বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই এটি যে করেই হোক, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
মন্ত্রণালয় ও বায়রার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বৈঠকে বায়রাকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর একটি বাস্তবসম্মত খরচ নির্ধারণ করতে বলা হয়। পরে বায়রা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সব মিলিয়ে জনপ্রতি ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা খরচ নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় সরকারকে। তবে মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে সেই খরচ ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে।
সৌদি আরবে কর্মী যাওয়ার খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীসহ আমাদের সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সৌদি বাজার উন্মুক্ত হয়েছে। এবার যে করেই হোক, আমাদের অভিবাসন খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ, যত সমস্যা হয়, তার মূল কারণ এই অতিরিক্ত খরচ। এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে আবার বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’ তিনি বলেন, ‘সৌদি সরকার বলেছে, তারা আইন করেছে, ভিসা কেনাবেচা করলে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে। সৌদি আরব তাদের দেশে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখবে। আমাদের দেশেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। খরচের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ২০১৭ সালের মধ্যেই তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে সৌদি আরবে।’