স্বপ্নের সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় হরিপুরবাসী

কুষ্টিয়ার গড়াই নদের ওপর নির্মিত কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু। ২৪ মার্চ এটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এখন চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ। গতকালের ছবি l প্রথম আলো
কুষ্টিয়ার গড়াই নদের ওপর নির্মিত কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু। ২৪ মার্চ এটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এখন চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ। গতকালের ছবি l প্রথম আলো

গড়াই নদের ওপর নির্মিত কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুটি ২৪ মার্চ চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ৩০ বছরের স্বপ্নপূরণ হতে যাওয়া সেতুটি ঘিরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ-হরিপুর ইউনিয়নের লাখো মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হরিপুরবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেতুটি অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ২৪ মার্চ সেতুটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। সেভাবেই সেতুর উদ্বোধনী ফলক করা হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া শহর ঘেঁষে গড়াই নদ। নদের ওপারেই হাটশ-হরিপুর ইউনিয়ন।
এই ইউনিয়নে প্রায় এক লাখ মানুষের বাস। ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন কুষ্টিয়া শহরে যাতায়াত করে। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর গ্রীষ্মে ধু ধু বালুতে হেঁটে গড়াই নদ পার হওয়ার কষ্ট-বিড়ম্বনা হরিপুরবাসীর দীর্ঘদিনের। কয়েক যুগ ধরে এলাকার মানুষ গড়াই নদের ওপর সেতু নির্মাণের আন্দোলন করে আসছিল।
এলজিইডি সূত্র জানায়, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার অ্যাসোসিয়েট এ সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পায়।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬০৪ মিটার, প্রস্থ ৬ দশমিক ১ মিটার। এর কুষ্টিয়া অংশে ২০০ মিটার ও হরিপুর অংশে ১৯৬ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭৮ কোটি টাকা। সেতু পারাপারে কোনো টোল নেওয়া হবে না।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন সেতুর পাশে গড়াই নদের ওপর কয়েকটি বড় বড় নৌকায় করে মানুষ পার হচ্ছে। সেতুর রেলিংয়ে রঙের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। বাতি লাগানো হচ্ছে। এর কুষ্টিয়া অংশে প্রবেশমুখের বাম দিকে বিশাল উদ্বোধনী
ফলক করা হয়েছে। সেখানে মাঝখানে বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতি করা হচ্ছে।
সেতুর বোয়ালদহ প্রান্তে বসে ছিলেন ৯০ বছরের জোনাব আলী সর্দার। নদ ও সেতুর দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘পায়ে হাঁটি, গড়াইয়ে সাঁতার কাটি কুষ্টি (কুষ্টিয়া) গিইছি, এহেনে সেতু হবি কল্পনাতেও পাবিনি। শুক্রবার সেতু খুলি দিবি, মনে আনন্দ লাগইছে।’
চাকরিজীবী নাজমুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকালে নৌকায় এই নদ পার হতে গিয়ে একাধিকবার নৌকাডুবি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সেতুটি এলাকাবাসীর কাছে আশীর্বাদস্বরূপ।
হরিপুরের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন নদ পার হয়ে এপারে কুষ্টিয়া শহরে পড়তে আসে। শিক্ষার্থী নাসিম আহমেদ বলে, সেতুটি চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বড় উপকার হচ্ছে।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক রবিউল ইসলাম বলেন, ২৪ মার্চ সেতু উদ্বোধনের পর বিকেলে হরিপুরে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জনসভা হবে।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সম্পা মাহমুদ বলেন, হরিপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষের স্বপ্নের সেতু খুলে দেওয়া হবে, এটা এলাকার মানুষের কাছে মহা আনন্দের।