স্বাধীন দুদকে প্রাধান্য জনপ্রশাসনের

প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের খবরদারি, বৈষম্য ও চাকরিচ্যুতির ঝুঁকিকে কেন্দ্র করে দুদকের কর্মীদের বড় অংশের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের ‘খবরদারি’, গুরুত্বপূর্ণ সব পর্যায়ের পদে জনপ্রশাসনের প্রাধান্য, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, পদোন্নতিতে বঞ্চনা ও চাকরিচ্যুতির ঝুঁকিকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিজস্ব জনবল বা কর্মীদের বড় অংশের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। সম্প্রতি যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সংস্থার উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠিত প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।

দুদকে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে কর্মীদের মধ্যে এই অসন্তোষের বিষয়টি জানা গেছে। এর মধ্যে দুদকের কর্মচারী চাকরিবিধির ৫৪(২) বিধিটি সম্প্রতি বেশি আলোচনায় এসেছে। এই বিধির বলে দুদক তার নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনা নোটিশে চাকরি থেকে অপসারণ করতে পারে, যার সর্বশেষ প্রয়োগ হয় শরীফ উদ্দিনের ওপর।

প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা যা-ই থাকুক, তাঁদের আনুগত্য সরকারের প্রতি। যে কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ পেলেও অনুসন্ধানের ব্যাপারে তাঁরা উৎসাহী হন না।
ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

দুদকের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ৫৪(২) বিধিটি বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানের মৌলিক অধিকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাঁদের ব্যাখ্যা, বিধিটি এ জন্যই বৈষম্যমূলক যে এটি কেবল দুদকের নিজস্ব জনবলের জন্য নির্দিষ্ট প্রযোজ্য। কিন্তু প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়, যা স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে এ ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন হয়েছে, যা এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানও মনে করেন, এই বিধি বৈষম্যমূলক। এর মধ্য দিয়ে দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটা বিভাজন তৈরি হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আইন অনুযায়ী দুদক একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মোট কর্মী ৯৭৪ জন। এর মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে নিযুক্ত কর্মকর্তা ২৪৮ জন। তাঁরা উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপসহকারী পরিচালক পদমর্যাদার। এই ২৪৮ জন কর্মকর্তার মধ্যে ২৩০ জন দুদকের নিজস্ব জনবল। বাকি ১৮ জন জনপ্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রেষণে আসা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কর্মক্ষেত্রে ভুলত্রুটি বা অপরাধের জন্য ৫৪(২) বিধির প্রয়োগ হয় কেবল ওই ২৩০ জনের ওপর। প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক কোনো ব্যবস্থা নেয় না বা নিতে পারে না। তারা শুধু প্রেষণে আসা কর্মকর্তার সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করে।

এ ছাড়া এই ধারার খড়্গ ঝুলিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেক সময় কোনো কোনো ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন দিতে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেন বলেও অভিযোগ আছে। শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের পর এ ধরনের অভিযোগ বেশ আলোচনায় আসে।

জানা গেছে, এই ৫৪(২) বিধিতে শরীফ উদ্দিনসহ এ পর্যন্ত তিনজনকে চাকরিচ্যুত করেছে দুদক। এ ছাড়া বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩০টি বিভাগীয় মামলা তদন্তাধীন।

তদন্তে কম, তদারকিতে আগ্রহ

বর্তমানে দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৯৭৪। এর মধ্যে উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপসহকারী পরিচালক আছেন ২৪৮ জন। পরিচালক, মহাপরিচালক, সচিব, কমিশনার ও কমিশনের চেয়ারম্যানসহ উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন পদে আছেন ৪৩ জন কর্মকর্তা। বাকি ৬৮৩ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারী।

এর মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে নিযুক্ত উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপসহকারী পরিচালক ২৪৮ জন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জন প্রেষণে আসা। অর্থাৎ অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে প্রেষণে হার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে পরিচালক, মহাপরিচালক, সচিব, কমিশনার, কমিশনের চেয়ারম্যানসহ উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন তদারকি পদে আছেন ৪৩ জন কর্মকর্তা, যার সিংহভাগই জনপ্রশাসন থেকে প্রেষণে আসা।

দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল্যায়ন হচ্ছে, প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা কষ্টসাধ্য অনুসন্ধান ও তদন্তকাজের চেয়ে তদারকিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। দুদক কোনো মামলায় হেরে গেলে সব দায় ও সমালোচনার মুখে পড়েন সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তদারকি কর্মকর্তাদের কখনো দোষারোপ করা হয় না।

দুদকে প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা ‘সুখকর নয়’ বলে মনে করেন সাবেক পরিচালক নাসিম আনোয়ার। তিনি দুদকে ৩৫ বছর চাকরি শেষে ২০২০ সালের জুলাইয়ে অবসরে গেছেন।

নাসিম আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুদকের চাকরিটা একটু ভিন্ন ধরনের এবং এটি জটিলও। এর মূল কাজ হচ্ছে অনুসন্ধান ও তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীকে বিচারের সম্মুখীন করে আদালত থেকে সুফল বের করে আনা। এর জন্য কর্মকর্তাকে সাক্ষ্য দিতে হয়, বহুবার আদালতে দৌড়াতে হয়। এ কারণে প্রেষণের কর্মকর্তারা অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন। দায়িত্ব পড়লেও তাঁরা কালক্ষেপণ করেন।’

জনপ্রশাসনের প্রাধান্য

দুদকের উচ্চপর্যায়ের ৪৩টি পদের ২৩টিতে আছেন প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা। এর মধ্যে মহাপরিচালক, পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রাধান্য। দুদকের চেয়ারম্যানসহ তিন সদস্যের কমিশনের দুজনই জনপ্রশাসনের অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব। মহাপরিচালক পদে থাকা সাতজনই প্রেষণে জনপ্রশাসন থেকে আসা।

একইভাবে আটটি অনুবিভাগের মধ্যে কেবল আইন বিভাগ ছাড়া বাকি সাতটিতেও আছেন জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে প্রশাসন, বিশেষ তদন্ত, তদন্ত-১, তদন্ত-২, মানি লন্ডারিং, প্রতিরোধ, প্রশিক্ষণ ও আইসিটি—এই সাত অনুবিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। দুদকে বর্তমানে ৩২ জন পরিচালক আছেন। তাঁদের মধ্যে ১২ জন জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে আসা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে দুদকের চেয়ারম্যান, কমিশনার ও সচিব নিয়োগে জনপ্রশাসনের প্রাধান্য ক্রমেই বাড়ছে।

এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন আবদুল্লাহ্‌ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিশন প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৪ সালে। এটি সরকারের অর্থে চলে। সুতরাং উচ্চ পদে প্রেষণে সরকারি কর্মকর্তা থাকবেন—এটাই স্বাভাবিক। এ রকম সব প্রতিষ্ঠানেই আছে। তাই বলে একেবারে প্রশাসনের যে প্রাধান্যের কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়।’ তিনি বলেন, দুদকের কর্মকর্তারা ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে উঠে আসবেন, তখন প্রেষণ আস্তে আস্তে কমে যাবে।

দুদক আইনের ৮(১) ধারায় কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আইনে, শিক্ষায়, প্রশাসনে, বিচারে বা শৃঙ্খলা বাহিনীতে অন্যূন ২০ বৎসরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি কমিশনার হইবার যোগ্য হইবেন।’

যদিও ২০০৯ সালের পর থেকে সব চেয়ারম্যান এসেছেন জনপ্রশাসন থেকে। কমিশনারদের ক্ষেত্রেও জনপ্রশাসনের আধিক্যই বেশি।

২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুদক প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ছয়টি কমিশন আসে। দুদকের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চেয়ারম্যান হন সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ উদ্দিন চৌধুরী। ২০০৯ সালের পর চারটি কমিশনেরই চেয়ারম্যান হন প্রশাসন থেকে অবসরে যাওয়া জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

আবার সচিব নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। দুদক আইনের ১৬ ধারায় বলা হয়েছে, কমিশনের একজন সচিব থাকবেন, যিনি কমিশন কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।’ কিন্তু এ পর্যন্ত দুদকে যত সচিব এসেছেন, তাঁদের সবাই সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হয়েছেন। আইন অনুযায়ী কমিশন কর্তৃক নিযুক্ত হয়নি।

এ বিষয়ে দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের বক্তব্য জানতে তাঁকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। মুঠোফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। বার্তাটি তিনি দেখেছেন (সিন করেন), কিন্তু সাড়া দেননি।

নিয়োগে ৩ নম্বর পদ্ধতি এবং

শূন্য পদে নিয়োগের জন্য দুদকের কর্মচারী চাকরিবিধিমালা ২০০৮–এর ১৬(৪) বিধিতে চারটি পদ্ধতির কথা বলা আছে। এক. সরাসরি নিয়োগ, দুই. পদোন্নতি, তিন. প্রেষণে বদলি, চার. চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ।

কিন্তু দুদকের বিদ্যমান জনবলকাঠামো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুদক প্রথম দুটি বাদ দিয়ে ৩ নম্বর পদ্ধতি, অর্থাৎ প্রেষণের চর্চাই করছে সর্বাধিক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিশন চাইলে দুদকের নিজস্ব জনবল থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে মহাপরিচালক ও পরিচালক নিয়োগ করতে পারে। দুই পদের জন্য অভিজ্ঞ কর্মকর্তা দুদকে আছেন। এ ছাড়া দুদকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য ‘পরীক্ষা উত্তীর্ণ’ হওয়ার এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে—যাকে পদোন্নতি ঠেকানোর ‘ফাঁদ’ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে অনেকে একই পদে আছেন প্রায় এক যুগ ধরে।

বিষয়টি স্বীকার করেন দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন আবদুল্লাহ্‌। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিশনের পদোন্নতির পদ্ধতিটা একটু জটিল। আমরা এটাকে সহজ করার চেষ্টা করছি।’

অভিযোগ রয়েছে, দুদকের শীর্ষ পর্যায়ের পছন্দেই বেশির ভাগ কর্মকর্তা প্রেষণে নিয়োগ পান। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যেমন প্রেষণের কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়, তেমনি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদেও প্রেষণের কর্মকর্তাদের বসানো হয়।

আবার প্রেষণের কর্মকর্তাদের অনেকে দুদকের একই পদে বছরের পর বছর থাকার নজিরও রয়েছে। যেমন, পরিচালক (অর্থ) আবদুল আউয়াল এবং পরিচালক (জনসংযোগ) মাজেদুল ইসলাম পাঁচ বছর ধরে দুদকে আছেন। যদিও দুদকের বিধি (২২)–এ বলা হয়েছে, প্রেষণে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীর সময়কাল হবে অনধিক তিন বছর।

যাচাই-বাছাইতেও জনপ্রশাসন

দুদকের অন্যতম গুরুত্ব বিষয় হচ্ছে অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটি। গড়ে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০টি অভিযোগ জমা হয়। তিন সদস্যের এই যাচাই-বাছাই কমিটির সবাই প্রেষণে আসা কর্মকর্তা। বর্তমানে এই কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন একজন অতিরিক্ত সচিব। অপর দুজনের একজন উপসচিব, অন্যজন সিনিয়র সহকারী সচিব।

আগে দুদকে জমা হওয়া অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তিনটি কমিটি ছিল। বিগত ইকবাল মাহমুদ কমিশন সেটি বাতিল করে একটি কমিটি করে।

বিশেষ করে, দুদকের অনুবিভাগ ‘বিশেষ তদন্ত’ শাখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ শাখা থেকে বড় বড় দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান হয়। শাখাটির দায়িত্বে আছেন সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২১ সালে দুদকে ১৪ হাজার ৭৮৯টি অভিযোগ জমা হয়। এর মধ্যে ১১ হাজার ৩৬৭টি অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয় বা বাদ দেওয়া হয়। বাকি অভিযোগগুলোর ৫৩৩টির অনুসন্ধান হয়। ২ হাজার ৮৮৯টি অভিযোগ বিভিন্ন বিভাগে পাঠানো হয়। ২০২০ সালে দুদকে অভিযোগ এসেছিল ১৮ হাজার ৪৮৯টি। এর মধ্যে ১৫ হাজার ১৯৮টি নথিভুক্ত করা হয়। ২ হাজার ৪৬৯টি বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়ে বাকি ৮২২টি অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুদকে আসা দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বড় অংশ আসে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বাছাইপ্রক্রিয়াতেই অনেক অভিযোগ বাদ দেওয়া হয়। আবার অনেক অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয় না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা যা-ই থাকুক, তাঁদের আনুগত্য সরকারের প্রতি। যে কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ পেলেও অনুসন্ধানের ব্যাপারে তাঁরা উৎসাহী হন না। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহলের ক্ষেত্রেও একই প্রভাব কাজ করে।

ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের শুরুটাই ছিল গলদ। সবার প্রত্যাশা ছিল ব্যুরোর স্থলে এটি একটি নতুন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হবে। সেটি হয়নি। তারই ধারাবাহিকতায় প্রশাসন থেকে কর্মকর্তাদের প্রেষণে কমিশনে আনা হয়। এখন এটি প্রকট আকার ধারণ করেছে।