স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপারে সরকার অমনোযোগী

স্বাস্থ্য খাতের বাজেটবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা অংশ নেন
ছবি: সংগৃহীত

সরকার স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপারে অমনোযোগী। জাতীয় বাজেটে বছরের পর বছর স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনের চেয়ে কম বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। দক্ষতার অভাবে সেই বাজেটও খরচ করতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেও কোনো লাভ হয় না।

আজ সোমবার স্বাস্থ্য খাতের বাজেটবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ‘স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রাক্‌–বাজেট জাতীয় সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ও উন্নয়ন সমন্বয়। ২০২২–২০২৩ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচক বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাক্‌স্বাধীনতা, মুক্ত গণমাধ্যম, সামাজিক নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার—এসব বিষয়ের চেয়ে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। অবকাঠামো বা মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন দেখানো যায়। ২০২১–২২ অর্থবছরে ১০ মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া বরাদ্দের মাত্র ৪১ দশমিক ৮৬ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। এক মাসে বরাদ্দের বাকি ৫৯ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। মন্ত্রণালয় খরচ করতে পারবে না।

বাংলাদেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৮ শতাংশ আসে নাগরিকদের নিজের পকেট থেকে, সরকার ব্যয় করে ২৩ শতাংশ। নাগরিকদের ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ চলে যায় ওষুধ, গজ–ব্যান্ডেজ, সিরিঞ্জ এসব কিনতে।
আতিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

অর্থ ফেরত যাবে। এটা প্রমাণ করে স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপারে সরকার কতটা অমনোযোগী।
জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বললে বিশেষ কোনো কাজ হয় না বলে মন্তব্য করেন সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি। গাইবান্ধা–১ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো দিকে যাচ্ছে, তারা খরচ করতে না পেরে টাকা ফেরত পাঠাচ্ছে। রাষ্ট্র একা দেশের সব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারবে না। বেসরকারি খাতকে সঙ্গে নিতে হবে। এই খাতে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে।

অনুষ্ঠানের মূল উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে বলেন, বাংলাদেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৮ শতাংশ আসে নাগরিকদের নিজের পকেট থেকে, সরকার ব্যয় করে ২৩ শতাংশ। নাগরিকদের ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ চলে যায় ওষুধ, গজ–ব্যান্ডেজ, সিরিঞ্জ এসব কিনতে।

মোট বাজেটের ৭–৮ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যের মোট বরাদ্দের ৪৫ শতাংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করা দরকার।

জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গত ৫০ বছরে বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন আসেনি।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ৬৪ জেলাতেই দুষ্টচক্র আছে। বিকেন্দ্রীকরণ করতে গিয়ে সেবার মান ঠিক রাখা যাচ্ছে না। আলোচনায় অংশ নিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, সংখ্যাগত খেলা থেকে বের করে বাজেট দলিলকে কৌশলপত্র হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে। স্বাস্থ্যকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করলে স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান সমস্যার সমাধান হবে না।

আরও পড়ুন