স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা একটা ফ্যাশন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক
ফাইল ছবি

স্বাস্থ্য খাত নিয়ে টিআইবির প্রকাশিত রিপোর্টটি মিথ্যা ও ভুল তথ্যসংবলিত দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনাকালীন সংকটে দেশের স্বাস্থ্য খাত যখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত, তখন টিআইবি স্বাস্থ্য খাতকে নিয়ে একটি অসত্য রিপোর্ট তুলে ধরেছে। টিআইবির রিপোর্টটি আগাগোড়াই ভুল তথ্যসংবলিত।

করোনায় মারা যাওয়া হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ মনোয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির অভিযোগ তোলা অনেকের কাছেই এখন একটি ফ্যাশন, এটা এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অথচ বেসরকারি হাসপাতালের টেস্টিং জালিয়াতি, একজন ড্রাইভার বা নিম্নপদস্থ কর্মচারীর দুর্নীতি বা বিচ্ছিন্ন কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে অস্বচ্ছতার খবর ছাড়া কেউ স্বাস্থ্য খাতের বড় কোনো দুর্নীতি দেখাতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে যারাই স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম করেছে, তাদেরই আইনের আওতায় এনে বিচার করা হয়েছে।

শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রুমে বসে থেকে টিআইবি স্বাস্থ্য খাত নিয়ে মনগড়া সমালোচনা করেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার দুঃসময়ে টিআইবি মাঠে নেমে কোনো কাজ করেনি। মাঠে কাজ করেছে দেশের স্বাস্থ্য খাতের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রুমে বসে তারা মুখস্থবিদ্যার মতো ঢালাওভাবে স্বাস্থ্য খাতের সমালোচনা করেছে।

টিআইবির করা কিছু সমালোচনা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিআইবি বলেছে দেশে কোভিড টেস্টিং সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়নি। অথচ দেশে কোভিড টেস্টিং কেন্দ্র মাত্র ১টি থেকে এখন ৫১০টি করা হয়েছে। টিআইবি বলেছে, হাসপাতালগুলোতে করোনা বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়নি, অথচ এখন দেশে করোনার বেডসংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।

কিছুদিন আগেও ঢাকা নর্থ সিটি করপোরেশন হাসপাতালে প্রায় ১ হাজার নতুন কোভিড ডেডিকেটেড বেড বৃদ্ধি করা হয়েছে, যেখানে প্রায় সবই সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুবিধাপ্রাপ্ত এবং সেখানকার অর্ধেকসংখ্যকেই আইসিইউ সুবিধা রয়েছে। টিআইবি বলেছে, দেশে আইসিইউ বেডসংখ্যা বাড়েনি। অথচ করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৩০০ ভাগ আইসিইউ বেডসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে দেশে ২০০টির মতো আইসিইউ বেড ছিল। আর এখন আইসিইউ বেডসংখ্যা ১ হাজারের বেশি হয়েছে।

টিআইবি ভারতের সঙ্গে ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তিতে অস্বচ্ছতার কথা বলেছে, যা মোটেও সত্য নয়। ভারতের সঙ্গে চুক্তি থেকে শুরু করে সবকিছু ছিল স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার ও উন্মুক্ত। দেশের সব মানুষই জানে, ভারতের সঙ্গে কী কী ছিল চুক্তিতে এবং কেন ভারত চুক্তির অবশিষ্ট টিকা দিতে পারেনি।

স্বাস্থ্য খাত নিয়ে টিআইবি কেবল সমালোচনা করার জন্যই সমালোচনা করেছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাত নিয়ে তারা (টিআইবি) কেবল সমালোচনা করার জন্যই সমালোচনা করেছে, কিন্তু করোনা কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য তারা করেনি। কারণ, তারা করোনা নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রচারণা বা ভূমিকাই রাখেনি।

টিকা ক্রয় নিয়ে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে দ্রুতই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে প্রত্যাশা রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলেও জানান জাহিদ মালেক।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীর জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এ বি এম খুরশিদ আলম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ।