স্মৃতিসৌধে নবাব পরিবারের শোকগাথা

পুরোনো ছবি, বর্তমান ছবি
পুরোনো ছবি, বর্তমান ছবি

ঢাকার শত বছরের পুরোনো ছবি নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর থেকে প্রকাশিত আলোকচিত্রে সেকালের ঢাকা অ্যালবামে ১৮৯০ সালের একটি ছবি পাওয়া গেল। ছবির বর্ণনায় বলা হয়েছে, এটি খাজা হাফিজুল্লাহ স্মৃতিসৌধ। তবে সৌধটি কোথায় অবস্থিত, সে সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ নেই। পুরান ঢাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছবিটি পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের ভেতরে অবস্থিত। কিন্তু কে এই খাজা হাফিজুল্লাহ? যাঁরা জানেন না তাঁরা শুনে অবাক হতে পারেন, ঢাকার নবাব খাজা আহসানুল্লাহর বড় ছেলে এই হাফিজুল্লাহ। যাঁরা ঢাকার ইতিহাস সম্পর্কে জানেন, তাঁরা নিশ্চয়ই খাজা আবদুল গণির ছেলে নবাব আহসানুল্লাহ সম্পর্কে জানেন। জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, নওয়াব আহসানুল্লাহ অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও ধীরস্থির প্রকৃতির লোক ছিলেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি ঢাকা নওয়াব এস্টেট পরিচালনার দায়িত্ব পান। তাঁর নামেই আহসান মনজিল। ঢাকায় সে সময় এমন কোনো মসজিদ, দরগাহ কিংবা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান ছিল না, যা তাঁর দান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। খাজা আহসানুল্লাহ মারা গেলে তাঁর বড় ছেলে খাজা হাফিজুল্লাহই ঢাকার পরবর্তী নবাব হবেন—এমনটি চিন্তা করে সবাই তাঁকে সমীহ করতেন। নওয়াব পরিবারও অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তাঁকে লালন করতেন। কিন্তু ১৮৮৪ সালে হাফিজুল্লাহর অকালমৃত্যুতে নবাব পরিবার তথা সারা ঢাকা শহরই শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। পুত্রশোকে নবাব আহসানুল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুত্রশোকের কারণে ইংরেজদের বিনোদনের জন্যও তিনি কোনো আয়োজন করছিলেন না। ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা গেল, ইংরেজরা তখন নবাবকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এবং খাজা হাফিজুল্লাহর স্মৃতিকে জীবিত রাখতে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তাঁর পরিচিতিমূলক একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেন। এ জন্য তৎকালীন ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে গ্রানাইট পাথরে তৈরি বৃহদাকার স্মৃতিস্তম্ভ জাহাজে করে আনা হয়। স্তম্ভটির চারপাশ মসৃণ এবং চকচকে করে তৈরি করা হয়। গোড়ার দুই দিকে পরিচিতিমূলক লিপি খোদাই করা হয়। ১৮৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় ছোট লাট সাহেব এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে খাজা হাফিজুল্লাহ স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করেন। ১৯০১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আহসানুল্লাহ মারা গেলে জীবিত জ্যেষ্ঠ পুত্র হিসেবে শেষ পর্যন্ত খাজা সলিমুল্লাহ নওয়াব উপাধিতে ভূষিত হন। কেউ যদি এখনো বাহাদুর শাহ পার্কে যান, দেখতে পাবেন ১৩১ বছর আগে নির্মিত নবাব পরিবারের সেই স্মৃতিসৌধ।
লেখা: শরিফুল হাসান। ছবি: হাসান রাজা