স্লোগানে সুর, স্লোগানে ছন্দ!
ভোটের মাঠে হরেক রকমের সুর। স্লোগানে মিলছে ছড়ার ছন্দ। পরিচিত গানের কলি কানে ভাসছে ‘নির্বাচনের সুরে’। বেলা দুইটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত শহরের অলি-গলি ছাপিয়ে রাজপথে মাইকে ভেসে আসছে ছন্দময় স্লোগান।
কখনো চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষায় মাইকে ভেসে আসছে ‘নদীর ফানি ঘরত আসে/হান্ডি-ফাতিল ফানিত ভাসে/এই ফানি আর নঅ চাই/হাতি মার্কায় ভোট চাই’। চলতে-ফিরতে পথচারীর কানে বাজবে ‘চাটগাঁবাসী বাঁধল জোট/কমলা মার্কায় দেবে ভোট’।
প্রতীক নিয়েও রয়েছে মজার সব স্লোগান। শুনলেও মনে হয় মাইকে কেউ ছড়া পাঠ করছে। বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলমের প্রচারণায় সাড়া ফেলেছে মজার স্লোগান ‘মনজু ভাই দেশ ও দশের/কমলা তো মিষ্টি রসের’। কখনো শোনা যায় ‘কমলা ভাই রসে ভরা/রাস্তাঘাট মনজুর গড়া’।
পিছিয়ে নেই আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছিরও। তাঁর প্রচারণায়ও শোনা যায় ‘উন্নয়নে নাছির ভাই/তাঁর জন্য ভোট চাই’। কিংবা ‘নাছির ভাইয়ের মার্কা হাতি/অন্ধকারে জ্বলবে বাতি’।
কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরাও কম যান না। একটি স্লোগান বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, ‘ভোট দিবা ভাই ফাল মারি/ মার্কা আঁরার আলমারি’।
তপ্ত রোদে যানজটে আটকে পড়া মানুষের প্রশান্তি হতে পারে এমন সব নির্বাচনী গানও রয়েছে। ‘মায়ের কোলে শিশুর হাসি/অমুক ভাইকে ভালোবাসি’, কিংবা ‘অমুক ভাইয়ের সুন্দর মন/শান্তি পাবে জনগণ’।
কিছু ছড়া আবার প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর পক্ষেই শোনা যায়। ‘আমরা সবাই এক জোট/হাতি মার্কায় দিব ভোট’, কিংবা ‘কমলা মার্কায় দিলে ভোট/শান্তি পাবে দেশের লোক’। কখনো অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্লোগান ‘হিন্দু-মুসলিম বাঁধল জোট, অমুক মার্কায় দেবে ভোট’।
পাড়ায় পাড়ায় এসব ছান্দিক প্রচারণা মানুষ কান পেতে শোনে। চায়ের দোকানে, আড্ডায় কিংবা নির্বাচনী ক্যাম্পে প্রার্থীদের স্লোগান নিয়ে কথা হয়। তর্কবিতর্ক হয়। কথায় কথায় ছড়া কাটা চাটগাঁবাসীর পুরোনো রেওয়াজ। কালের বিবর্তনে সেই রেওয়াজ ধীরে ধীরে উঠে গেলেও নির্বাচনের মতো কোনো উপলক্ষ এলে তা আবার চাঙা হয়ে ওঠে।
প্রতিপক্ষকে ছড়ায় ঘায়েল করার চেষ্টাও থাকে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। যেমন হাতি মার্কার প্রচারণা শুনে কেউ কেউ বলছেন, ‘আসছে ধেয়ে বনের হাতি/পিষ্ট হবে দেশ ও জাতি’। ঠিক তেমনি কমলার প্রচারণার বিরুদ্ধেও কেউ কেউ মজা করে বলছেন, ‘আসছে রে ভাই দুর্দিন/কমলাতে ফরমালিন’। এসব ছড়া কিংবা ছন্দে বাঁধা স্লোগান দিয়ে বোঝা যায় না মানুষের মনের মতিগতি। সে জন্যই হালিশহরের বাসিন্দা আলিম মজা করেই বললেন, ‘আঁআর ভোট আঁআই দিয়ুম/কেয়ারে কিছু নঅ হইয়ুম’। (আমার ভোট আমি দেব/কাউকে কিছুই বলব না)।