হজ পালনের জন্য মিনার উদ্দেশে রওনা আজ
পবিত্র হজ পালন করতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মিনার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন আজ বুধবার। মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে মিনা। মিনায় কেউ যাবেন গাড়িতে, কেউবা হেঁটে।
হজের অংশ হিসেবে তাঁরা ৭ থেকে ১২ জিলহজ পাঁচ দিন মিনা, আরাফাহ, মুজদালিফায় অবস্থান করবেন। ৮ জিলহজ মিনায় সারা দিন এবং ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। আরাফাত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় রাত যাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন হাজিরা। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরে আসবেন। মিনায় এসে বড় শয়তানকে পাথর মারা, কোরবানি ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে মক্কায় কাবা শরিফ তাওয়াফ করবেন। তাওয়াফ শেষে মিনায় ফিরে গিয়ে ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান ও প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন।
মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় নয় কিলোমিটার। আরাফাতের ময়দান থেকে মুজদালিফার দূরত্বও প্রায় নয় কিলোমিটার। মুজদালিফা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। কিছু হজযাত্রী হেঁটে হজের এই আমলগুলো করে থাকেন।
সৌদি আরবে বিমানবন্দরে নামার পর থেকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে হাজিদের মক্কা-মদিনায় পৌঁছানো, মক্কা-মদিনায় আবাস, মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে থাকা-খাওয়া, যাতায়াতসহ সবকিছুর ব্যবস্থা যাঁরা করেন, তাঁদের বলা হয় মোয়ালেম। একমাত্র সৌদি আরবের নাগরিকেরাই মোয়ালেম হতে পারেন। প্রত্যেক মোয়ালেমের নির্দিষ্ট নম্বর আছে।
প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ নিজ মোয়ালেম কার্যালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কখন মিনার উদ্দেশে রওনা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দেওয়া হয় মিনার তাঁবু নম্বরসংবলিত কার্ড। ওই কার্ড সব সময় গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হয়। একইভাবে মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে কীভাবে কখন রওনা হবেন, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয় আগেভাগে।
আমাদের মোয়ালেম বুধবার এশার নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে গতকাল জানিয়েছেন। যেহেতু পাঁচ দিন পরে আবার বাসায় ফিরব, তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিতে হবে। মক্কার নিজ বাসাতেই অজু-গোসল সেরে সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় পরে হজের নিয়ত করতে হবে। ইহরামের কাপড় (আড়াই হাত বহরের আড়াই গজ কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ কাপড়) এক সেট পরে নিতে হবে, অতিরিক্ত আরেক সেট থাকবে ব্যাগে। এ ছাড়া এক সেট সাধারণ পোশাক (শার্ট-প্যান্ট অথবা পাঞ্জাবি-পায়জামা) পেস্ট, ব্রাশ, সাবান, চার্জারসহ মুঠোফোন, মুজদালিফায় রাতে ঘুমানোর জন্য হালকা বিছানাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছোট ব্যাগে নিলে ভালো হয়। কারণ, নিজের ব্যাগ নিজেকেই বহন করতে হবে। মোয়ালেম খাবারের ব্যবস্থা করবেন।
মিনায় (জামারাত) শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ (মোয়াচ্ছাসা) হাজিদের ভাগ ভাগ করে জামারাতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।
মনোরেল সেবা: কয়েক বছর হলো হাজিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আরাফাত থেকে মিনা পর্যন্ত মনোরেল সেবা চালু করা হয়েছে। প্রায় ১৮ কিলোমিটার এ পথে রয়েছে নয়টি স্টেশন (আরাফাতে তিনটি, মুজদালিফায় তিনটি এবং মিনায় তিনটি)। এ প্রকল্পের নাম আল-মাশায়ের আল-মোগাদ্দাস মেট্রো লাইন প্রকল্প। মিনায় যাঁদের তাঁবু রেলস্টেশনের কাছাকাছি পড়েছে, তাঁরা চাইলে রেলের টিকিট কিনতে পারেন। সৌদি ২৫০ রিয়াল দিয়ে মোয়ালেমের অফিস থেকে এ টিকিট পাওয়া যায়। এ টিকিট দিয়ে পুরো হজের পাঁচ দিন প্রয়োজনমতো যাওয়া-আসা করা যায়। আমাদের তাঁবু রেলস্টেশন থেকে দূরে হওয়ায় আমাদের রেলের টিকিট দেননি মোয়ালেম।
মিনায় হাজিদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় শুধু দক্ষিণ এশিয়ার হজযাত্রীদের জন্য ১ থেকে শুরু করে ১১৫ নম্বর পর্যন্ত মোয়ালেম আছেন। মিনার তাঁবু বরাদ্দ হয় জামারাত ও রেলস্টেশনকে কেন্দ্র করে। মোয়ালেমকে অতিরিক্ত অর্থ দিলে জামারাতের (শয়তানকে পাথর মারার স্থান) কাছে তাঁবু পাওয়া যায়। তেমনিভাবে আফ্রিকা, স্থানীয় সৌদি, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ থেকে আসা হজযাত্রীদের জন্য রয়েছে আলাদা জোন। মিনায় এমন সাতটি জোন রয়েছে।
মদিনাপ্রবাসী মাকসুদ বিন সায়িদ জানান, যেসব এজেন্সি বাড়তি অর্থ দেয়, তাদের মাধ্যমে আসা হাজিদের তাঁবু মোয়ালেমরা জামারাতের কাছাকাছি অথবা রেলস্টেশনের কাছাকাছি রাখেন। এ অর্থ এজেন্সি আদায় করে হাজিদের কাছ থেকে।
হজের সময় মিনার সব রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় জামারাত থেকে দূরে তাঁবু পাওয়া হাজিরা, বিশেষ করে যাঁরা বৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে দুর্বল, তাঁরা অসুবিধায় পড়েন। কারণ, তাঁদের দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়। হাঁটার সময় কেউ কেউ পথও হারিয়ে ফেলেন। এ ছাড়া তাঁবুগুলো দেখতে এক রকম হওয়ায় এবং এগুলোতে আরবিতে নম্বর যুক্ত থাকায় অনেকে নিজ তাঁবু চিনতে সমস্যায় পড়েন।
মোয়ালেম দপ্তর সূত্র জানায়, জামারাতের কাছে মোয়ালেম নম্বর ২২-এর অধীনে থাকবেন বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আসা হাজিরা। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে আসা হাজিরা থাকবেন ৪, ১৪, ১৮,২২, ৫৩, ৫৮, ৬৬, ৭১, ৭২, ৭৭, ৮০, ৮১, ৮৪, ৮৪ এবং ৮৭ থেকে ৯০, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৮ থেকে ১১৫ মোয়ালেম নম্বরের অধীনে।
মিনায় হাজিদের সহায়তার জন্য ৬/৫৬ নম্বর তাঁবুতে পাঁচ দিন বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ের কার্যক্রম চালানো হবে।