হজ ফ্লাইট শুরু ৫ জুন, বিমানের ১৩০ ফ্লাইট

ফাইল ছবি: রয়টার্স

এবারের হজযাত্রী পরিবহন করা হবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে। যাওয়া-আসা মিলিয়ে ৬৫টি করে মোট ১৩০টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। হজের প্রথম ফ্লাইট যাবে ৫ জুন। বিমানের সব কটিই ডেডিকেটেড ফ্লাইট হবে।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টারে এক মতবিনিময় সভায় বিমানের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে এ সভা করে বিমান কর্তৃপক্ষ। বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৯ হাজার যাত্রী হজযাত্রী তারা বহন করবে। এর মধ্যে সরকারিভাবে হজযাত্রী থাকবেন ৪ হাজার ৫৬৪ জন।

সভায় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, অন্যান্য বছর হজযাত্রী পরিবহনে তাঁরা দুই থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত সময় পেতেন। এবার এক মাসের কম সময় তাঁরা পেয়েছেন। নির্ধারিত সময় তথা ৫ জুন থেকেই হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।

হজযাত্রায় উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, এবার কোনো উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবার হজের শুরুতে হজযাত্রী কত হবে, সেটা অনিশ্চিত থাকে। এবারও তাই ছিল। এ কারণে দুটি বিমান লিজ নেওয়ার কথা ছিল। তবে এবারের যাত্রীসংখ্যা কম হওয়ায় আমাদের আর উড়োজাহাজ ভাড়া করতে হচ্ছে না।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টারে মতবিনিময় সভা
ছবি: প্রথম আলো

জেট ফুয়েলের দাম বাড়ায় বিমান ভাড়া বাড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ইতিমধ্যে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ নেই।

টরেন্টো ফ্লাইট ২৮ জুন থেকে

ঢাকা-টরেন্টো গন্তব্যে প্রথম ফ্লাইট ২৮ জুন পরিচালনা করা হবে বলে জানান বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে তিনি এ–ও জানান, বিলিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্ল্যানিং (এজেন্সি) হয়নি বলে এই গন্তব্যের টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে না। এ গন্তব্যের জন্য বিজনেস লাইসেন্স এখনো পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। তিনি প্রথমে বলেন, বিমান ২৮ জুনেই যাবে। যদি সময় একটু বেশি লাগে তাহলে তারিখটা হয়তো একটু পেছাবে। টিকিট বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। টিকিট ছাড়তে পারছি না কারণ, বিলিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্ল্যানিংয়ের সঙ্গে ট্রাভেল এজেন্সির একটা সম্পর্ক আছে। এ সমন্বয়ের জন্য যে বিজনেস লাইসেন্স লাগে সেটি এখনো পাইনি। এসব না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। কেবল ওয়েবসাইটের টিকিট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব নয়।

দুদকের তদন্ত প্রসঙ্গে

২০১৪ সালের ১১ মার্চ ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া নেয় বিমান। ওই দুটি উড়োজাহাজ ছিল ত্রুটিপূর্ণ, বিমানের তাতে লোকসান হয় বলে গণমাধ্যমে সংবাদ আসে। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল আজ বুধবার বিমানের বলাকা ভবনে তদন্ত করতে আসে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিষয়টি সংসদীয় কমিটিতে ছিল। তারা সেটি দুদকে রেফার করেছে। সেটির পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের দল এসেছে। আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাই। দুদক যেন নির্বিঘ্নে তাদের কাজ শেষ করতে পারে, সে জন্য বিমানের লোকজন সেখানে কাজ করছে। সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিমানের পরিচালক (প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রেনিং) এয়ার কমোডর মো. মাহবুব জাহান খান বলেন, ‘আজ দুদকের দুজনের একটি দল এসেছে। আমার দলের বাকি লোকজন সেখানে আছে। আমাদের সব তথ্য সংরক্ষিত আছে। আমি ২০১৮ সালে জয়েন করেছি। এর আগেও আরও কয়েকবার তদন্ত হয়েছে। আমি দেখেছি, ইজিপ্টের দুটি বিমান ভিয়েতনামে আছে, যেখান থেকে ঠিক করে ফেরত দেওয়ার কথা। এই জটিলতার মধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।’

এ দুটি উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে সরকারের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, এ ক্ষেত্রে বিমান কী পদক্ষেপ নিয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব জাহান খান বলেন, বিমান এখান থেকে শিক্ষা নিয়েছে। এটা সবচেয়ে বড় কথা। এ ঘটনার পর বিমানের একটি লিজ গাইডলাইন হয়েছে। ভবিষ্যতে উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো সভা হবে, বোর্ডে কতবার উপস্থাপন করতে হবে, তা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিমান এয়ারলাইনসের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি ক্যাপ্টেন এনামুল হক তালুকদার, পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন সিদ্দিকুর রহমান, বিএফসিসির মহাব্যবস্থাপক শামসুল করিম, গ্রাহক সেবার পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান, বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ যাহিদ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের এয়ার কমোডর মৃধা মো. একরামুজ্জামানসহ প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা।