প্রথমে দোকান খুলতেন না। অবরোধ-হরতালের কয়েকটা দিন যাওয়ার পর অর্ধেক ঝাঁপ (শাটার) খুলে দোকানে বসতেন। তৈরি থাকত তালা-চাবি। এখন অবরোধ হোক, হরতাল হোক—পুরো দোকানই খোলা থাকে। তবে ক্রেতা কম।
নিজের দোকান নিয়ে এমন বর্ণনা দিলেন রাজধানীর হাটখোলায় ‘রাজধানী মার্কেট’-এ তৈরি পোশাকের ব্যবসায়ী আবদুল আলিম। তবে এমন বক্তব্য অন্য দোকানিদেরও। হাটখোলা থেকে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী সর্বত্র একই চিত্র। দেখে বোঝার উপায় নেই, টানা হরতাল চলছে।
অবরোধ শুরু হয়েছে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। পরে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হরতাল। তার পরও কিছু বিপণিবিতানে বিক্রি কমেনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানী মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, দোতলায় খেলনার দোকানগুলো খোলা। বাচ্চাকে উড়োজাহাজ কিনে দিতে এসেছেন এক মা। দোকানি বললেন, বাচ্চারা হরতাল-অবরোধ বোঝে না। খেলনার আবদার করলে মা-বাবা না এসে পারেন না।
হাটখোলা থেকে যাত্রাবাড়ী বেশির ভাগ দোকানই খোলা দেখা গেল। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে চায়ের দোকানি রুস্তম আলী সরাসরিই বললেন, ‘পাবলিক এখন আর হরতালরে পাত্তা দ্যায় না।’ যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়কের মনিহারি দোকানি আকবর হোসেন ক্ষোভ জানিয়ে বললেন, ‘এত বেশি হরতাল দেওয়া হচ্ছে, একসময় হরতালের আর কোনো দাম থাকবে না।’
ঢাকা-ফেনী-ঢাকা চলাচলকারী পরিবহন স্টারলাইনের ব্যবস্থাপক মো. নাসিরউদ্দিন বললেন, আগে হরতালে দূরপাল্লার তাঁদের বাস বের হতো না। এখন ২৫টির মতো যায়। আসেও সমান সংখ্যক। কিন্তু যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক। গাড়ি আছে, যাত্রী কম। সব পরিবহনেরই একই অবস্থা।
সায়েদাবাদে হানিফ, শ্যামলী, ইকোনো, আল-বারাকা এসব পরিবহনের কাউন্টার পুরোপুরিই খোলা দেখা যায়। ইকোনো পরিবহনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, দিনের বেলায় মহাসড়কে চলতে গিয়ে মনে হয় না হরতাল চলছে। চিটাগাং রোড এলাকায় যানজটও হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-পূর্ব) মইনুল হক অবশ্য আগের তুলনায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কিছুটা কমেছে বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, যানবাহনে যাত্রী আগের তুলনায় বেড়েছে।
যাত্রাবাড়ী মোড়ের কাছে সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দেখা যায়, টাউন সার্ভিস বাস বিহঙ্গ, শিখর, বলাকাসহ কয়েকটি বাসের কর্মচারীরা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতে হাঁকডাক করছে। একই অবস্থা সায়েদাবাদ টার্মিনালের সামনের রাস্তায়। পোস্তাগোলা ও সাইনবোর্ডমুখী সড়কের দুই পাশে বেশ কয়েকটি লক্কড়-ঝক্কড় লোকাল বাস এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণও নেই। উপকমিশনার মইনুল হক বলেন, পরিস্থিতিগত কারণে এসব বিষয়ে কিছু শিথিলতা দেওয়া হচ্ছে।