হাইড্রোলিক হর্ন বাজছেই

হাইকোর্টের নিষেধের পরও যানবাহনে বিকট আওয়াজ সৃষ্টিকারী হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার অব্যাহত আছে। দূরপাল্লার বাস-ট্রাকের হর্নে এখনো কান পাতা দায়। নিষিদ্ধ এই হর্নের বিক্রিও থামেনি। পুলিশের অভিযানকে ফাঁকি দিতে চালকেরা দুই রকম হর্ন রাখছেন। পরীক্ষার সময় তাঁরা সাধারণ হর্নটি বাজাচ্ছেন।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দাবি করেছেন, হাইকোর্ট গাড়ি জব্দের নির্দেশনা দেওয়ায় হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো গাড়ির সংখ্যা কমে আসছে। গাড়ির মালিকেরা জব্দ হওয়ার ভয়ে নিজেরাই খুলে নিচ্ছেন। তবে দূরপাল্লার বাস-ট্রাকে এই হর্নের ব্যবহার যে থেমে যায়নি সেটা ট্রাফিক সার্জেন্টরাও স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলছেন, ১৯৮৩ সালের মোটরযান আইন অনুযায়ী হাইড্রোলিক হর্ন বাজানোর সর্বোচ্চ জরিমানা মাত্র ১০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্টের গাড়ি জব্দের নির্দেশনা হর্ন বন্ধে সহায়ক হবে।
গত দুই দিন সরেজমিনে ঢাকা শহরের ভেতরে চলাচলকারী প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার দেখা যায়নি। যাত্রী বহনকারী কিছু মিনিবাসকে উচ্চ শব্দের হর্ন বাজাতে দেখা গেছে। তবে শহরের আমিনবাজার ব্রিজ এবং বাবুবাজার ব্রিজ পার হলেই দূরপাল্লার বাস, ট্রাককে এবং লরিকে হাইড্রোলিক হর্ন বাজাতে দেখা গেছে।
বাবুবাজার ব্রিজের গোড়ায় আগানগরে কথা হয় ট্রাকচালক আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, জোরে হর্ন না বাজালে সামনে থেকে গাড়ি বা রিকশা সরে না। তা ছাড়া রাতে মহাসড়কে গাড়িগুলো বেপরোয়া গতিতে চলে, হাইড্রোলিক হর্ন না বাজালে কেউ রাস্তা দিতে চায় না বলে দাবি তাঁর।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাইড্রোলিক হর্নবিরোধী অভিযানে পুলিশ মূলত হর্নে লাগানো প্লাস্টিকের চোঙাটি খুলে নিচ্ছে।সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যে ১০ হাজার হর্ন ধ্বংস করেছে তাও ওই প্লাস্টিকের চোঙাই।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আমদানি তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ১২ কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৫ টাকার মোটরসাইকেল ও গাড়ির হর্ন আমদানি হয়েছে। তবে শুধু হাইড্রোলিক হর্ন কী পরিমাণে এসেছে তার আলাদা কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
যশোরের বেনাপোল সীমান্ত এবং চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে হাইড্রোলিক হর্নগুলো আসে। রাজধানীর বাংলাবাজারে মোটর পার্টসের কিছু ব্যবসায়ী এই হর্নগুলোর মূল আমদানিকারক। গতকাল বাংলাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা এখনো হাইড্রোলিক হর্ন বিক্রি করছেন। তবে ব্যবসায়ীরা কিছুটা গোপনীয়তা বজায় রাখছেন। ক্রেতাকে কিছুক্ষণ যাচাই-বাছাইয়ের পর হর্ন বের করছেন।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে দুই ধরনের হর্ন রয়েছে। দাম সর্বনিম্ন ৪৮০-৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১১০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। হাইড্রোলিক হর্নের বিক্রি কমে এসেছে দাবি করে ইকবাল অটো মোটরসের ম্যানেজার আজাদ বলেন, আগে দিনে ৫০-৬০টি হর্ন বিক্রি করতেন। এখন তেমন বিক্রি হচ্ছে না।
হাইড্রোলিক হর্ন নিয়ে গতকাল পান্থপথ মোড়, রাসেল স্কয়ার এবং টেকনিক্যাল মোড়ে দায়িত্ব পালনরত সার্জেন্টদের সঙ্গে কথা হয়। সার্জেন্ট সুমন কুমার মোহন্ত বলেন, চালকেরা এখনো গাড়িতে দুটো হর্ন ব্যবহার করছেন। শহরে ঢোকার পর তাঁরা কম আওয়াজের হর্নটি বাজান। শহর থেকে বেরোলেই হাইড্রোলিক হর্নে ফিরে যান।
ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের লাখ লাখ গাড়িতে এই হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো। এটি বন্ধ করা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয়। তা ছাড়া হাইকোর্টের পুরো আদেশও তাঁদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। আদেশ এলে তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।