হাজার বছরের স্মৃতি ধামইরহাটের মাহিসন্তোষ

সংস্কার চলছে ধামইরহাটের মাহিসন্তোষের। ছবি: সংগৃহীত
সংস্কার চলছে ধামইরহাটের মাহিসন্তোষের। ছবি: সংগৃহীত

মাহিসন্তোষ নওগাঁর পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। নওগাঁ সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তঘেঁষা চৌঘাটে ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিটির অবস্থান।

প্রত্নস্থলটিতে একটি মাঝারি আকারের প্রাচীরঘেরা চতুষ্কোণাকার দুর্গ রয়েছে। কয়েকটি দিঘি, পুকুর, রাজবাড়ি ও বারোদুয়ারী নামের একটি ঢিবিও আছে।

দুর্গের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তঘেঁষা প্রশস্ত খালও রয়েছে। প্রত্নস্থলটির উত্তর প্রান্তে চারটি অসম বাহুর সমন্বয়ে দুর্গটি তৈরি। চতুষ্কোণ দুর্গটি পূর্ব বাহু ২৩২ মিটার লম্বা। মাটির প্রাচীরগুলো আজও ৩.৫ মিটার উঁচু এবং ১৬.৭৬ মিটার চওড়া। দুর্গের বাইরে পূর্ব দিকে পুরোপুরি এবং উত্তর দিকে যে সংলগ্ন খাল রয়েছে, সেটি গড়ে ২৫ মিটার চওড়া এবং ২.৭৫ মিটার গভীর। দুর্গের ভেতরের অংশের জমি এবড়োখেবড়ো। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ ঘেঁষে বাইরের দিকে মাজার নামে একটি স্থান রয়েছে। এর ভেতরে পাশাপাশি দুটি কবর রয়েছে। লোকজন বলেন, দুটি কবর মাহিসন্তোষ ও তার কন্যার।

এ ছাড়া মাজারের বাইরে আরও একটি কবর রয়েছে। এটি হলো এক উজিরের। কবরটি ১৪ হাত লম্বা। সামান্য পশ্চিমে আরও কয়েকটি পুরোনো কবরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। লোকজন বলেন, এগুলো উজিরের কবর। এর দক্ষিণ-পূর্বে রাজবাড়ি। পশ্চিম দিকে একটি অবতল মেহরাবসহ উত্তর-দক্ষিণে লম্বা একটি ভাঙা ইটের দেয়ালের চিহ্ন দেখা যায়। দেয়ালটির কয়েকটি স্থানে পাথরের বহিরাবর্ণের চিহ্ন রয়েছে।

পশ্চিম দেয়ালের সমান্তরালে কিছু দূর পূর্বে এক সারি (বর্তমানে দুটি) পাথরের থামও দাঁড়ানো রয়েছে। মাহিসন্তোষের সঠিক ইতিহাস জানার কোনো সূত্র পাওয়া না গেলেও লোকমুখে প্রচলিত আছে, চৌঘাট বা এর আশপাশে প্রাক-ইসলামি আমল থেকেই কোনো না কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কেন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল। সেই কেন্দ্রের ধ্বংসাবশেষের ওপরই খ্রিষ্টাব্দ ১৩ শতকের মুসলিম বিজেতারা কোনো একটি সেনাশিবির গড়ে তুলেছিলেন। সেই সেনাশিবির অন্তত ১৬ শতক পর্যন্ত টিকে ছিল।

আবার অনেকের বিশ্বাস, বখতিয়ার খিলজি আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত ইজাউদ্দিন মোহাম্মদ শিরান খিলজি (১২০৭ থেকে ১২০৮ সাল) এখানেই নিহত হয়েছিলেন। এখানে তাঁকে কবর দেওয়া হয়ছিল। তা ছাড়া এটি ছিল সুলতানি আমলের বারবকাবাদ প্রশাসনিক এলাকার টাঁকশাল।

এ প্রত্নস্থলে ১৯১৮ সালে তদানীন্তন বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি সীমিত আকারে খননকাজ পরিচালনা করেছিল। ওই সময় এ ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি পাথরের মেহরাব পাওয়া যায়; যা ওই সমিতির রাজশাহী সংগ্রহশালায় (বর্তমানে বরেন্দ্র জাদুঘর) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই সময় প্রথম ধ্বংসস্তূপটি থেকে ১৫০৬-১৫০৭ সালের সুহাইলের পুত্রের নির্মিত একটি মসজিদ সম্পর্কিত আরবি ভাষ্য উৎকীর্ণ একটি পাথরের ফলক আবিষ্কৃত হয়েছিল। সেটিও বর্তমানে বরেন্দ্র জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

*লেখক: শিক্ষক, ধামইরহাট, নওগাঁ