হাফিজুরের মৃত্যুর দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র হাফিজুর মোল্লা ‘হত্যার’ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে অপরাজেয় বাংলার সামনে আজ বুধবার ‘প্রগতিশীল ছাত্র জোট’ বিক্ষোভ মিছিল করে। ছবি: ফোকাস বাংলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র হাফিজুর মোল্লা ‘হত্যার’ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে অপরাজেয় বাংলার সামনে আজ বুধবার ‘প্রগতিশীল ছাত্র জোট’ বিক্ষোভ মিছিল করে। ছবি: ফোকাস বাংলা

আলাদা দুটি বিক্ষোভ সমাবেশে আজ বুধবার নয়টি ছাত্র সংগঠনের নেতারা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর মোল্লার মৃত্যু একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে এর দায় নিতে হবে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে।

হাফিজুর মোল্লার ‘হত্যার’ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে অপরাজেয় বাংলার সামনে পাঁচটি ছাত্রসংগঠনের জোট ‘প্রগতিশীল ছাত্র জোট’ সমাবেশ করে। প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে চারটি সংগঠনের জোট ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’। সমাবেশের আগে দুটি জোটের নেতা-কর্মীরা আলাদা বিক্ষোভ মিছিল করেন।

নিউমোনিয়া ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র হাফিজুর ২ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের বারান্দায় থাকতেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, শীতের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের বারান্দায় থাকা এবং রাতে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যাওয়ার কারণে হাফিজুর ঠান্ডায় আক্রান্ত হন।

অপরাজেয় বাংলার সামনে সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও ছাত্র ঐক্য ফোরামের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘হলে গেস্টরুমে ছাত্র হয়রানি বন্ধ কর, নিরাপত্তা নিশ্চিত কর’ ও ‘অবিলম্বে হাফিজুর মোল্লার হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে’।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকি আক্তার বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে মেরে ফেলা হয়েছে। হলে থাকতে দেওয়ার শর্তে ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করা হয়। হলের অমানবিক পরিবেশের কারণেই অসুস্থ অবস্থায় হাফিজুরকে ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাঁরা দায়িত্বে অবহেলা করছেন। হাফিজুরের মৃত্যুর দায়ভার কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারে না। সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সাইফুজ্জামান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক ইকবাল কবির ও ছাত্র ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক সরকার আল ইমরান প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ থেকে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় অপরাজেয় বাংলায় ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সংহতি সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন ও ছাত্র গণমঞ্চের নেতা-কর্মীরা সমাবেশ করেন। নেতারা বলেন, এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটি হত্যাকাণ্ড। হাফিজুর মোল্লার এই মৃত্যুর কারণ সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অপরাজনীতি। তারা দলীয় কর্মসূচির নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘গেস্টরুম’ নির্যাতন চালিয়ে আসছে। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তাই এই মৃত্যুর দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।

অারও পড়ুন : বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের করুণ মৃত্যু
হাফিজুরের বাড়িতে চার দিনেও চুলা জ্বলেনি
হাফিজুর, আমাদের ক্ষমা করো