হামলা করে জামায়াত-বিএনপি

যশোরের অভয়নগর উপজেলার চাঁপাতলা গ্রামের মালোপাড়ায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে জামায়াত-শিবির। বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কিছু নেতা-কর্মী এ সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই সহিংসতার পর থেকে প্রথম আলো অনুসন্ধান চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে। সকালে কয়েকজনকে মারধর, দুপুরে পাড়ায় এক দফা হামলার পর প্রশাসনের সাহায্য না পাওয়ায় রাতে নারকীয় হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আর পূর্বাপর ঘটনা বিশ্লেষণ করে স্থানীয় রাজনীতি-সচেতন ব্যক্তিরা বলেছেন, সরকারি দল আওয়ামী লীগের বিভক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়েছে হামলাকারীরা। সদ্য সাবেক সাংসদ ও বিদায়ী সংসদের হুইপ শেখ আবদুল ওহাবের নির্বাচন-পূর্ববর্তী কয়েকটি বক্তব্য এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন তাঁরা।
আক্রমণ করেছে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি—এ ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য দিয়েছেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা। কিন্তু ওহাবের ভূমিকার ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তাঁরা। তবে ওহাবের বিরুদ্ধে সন্দেহের তির ছুড়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সাংসদ রনজিত রায়। রনজিতের বিরুদ্ধে যশোর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন আগেরবার এই আসনে দলের সাংসদ অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওহাব।
এ ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত এখনো শেষ করেনি থানার পুলিশ। তবে জেলা প্রশাসন তাদের তদন্ত শেষ করেছে। তাতে জামায়াত-শিবির ও বিএনপিকে দায়ী করা হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব হামলাকে সহজতর করেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।
হামলার প্রেক্ষাপট: রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে গত কয়েক দিন কথা বলে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির ভোটের আগের রাতে জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা মুহুর্মুহু বোমা ফাটিয়ে চাঁপাতলা আলিম মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রের আশপাশ প্রকম্পিত করে তোলে। ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে সে সময় কেন্দ্রটিতে অবস্থান করছিলেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা। যৌথ বাহিনী এসে আতঙ্কিত কর্মকর্তাদের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে চেঙ্গুটিয়ার বাহিরঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং পরদিন সকালে পৌঁছে দেয়।
জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওই রাতে চাঁপাতলা গ্রামের মালোপাড়ায় গিয়ে সংখ্যালঘুদের ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য শাসিয়ে আসে। মালোপাড়ায় পল্লী বিদ্যুতের কোনো সংযোগ ছিল না। পাড়ার বাসিন্দারা গ্রামেরই কয়েকটি মুসলিম পরিবারের কাছ থেকে পার্শ্বসংযোগ নিয়ে বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করতেন। তাঁরা ওই বিদ্যুৎ-সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পাড়ার বাসিন্দারা জানান, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের কয়েকজন ভোটকেন্দ্রে যান সকাল ১০টার পর। অন্যরাও ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রে চাঁপাতলা গ্রামের রহিম (৩২), কাসেম (৩৫), হুমায়ুন (২৮) এবং বাহিরঘাট গ্রামের রবের (২৯) নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কর্মী ৮-১০টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করেন। তাঁদের নির্দেশ উপেক্ষা করে ভোট দিতে যাওয়ায় বিশ্বজিৎ সরকার (৩৬), শ্যামল বিশ্বাস (৩৫) ও মুকুল সরকারকে (২৫) তাঁরা হকিস্টিক ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। এরপর ভয়ে অন্যরা আর ভোট দিতে যাননি।
মালোপাড়ার বাসিন্দা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকার ১৫ জানুয়ারি চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে রহিম, কাসেম, রব ও হুমায়ুন আমাদের মারধর করে। আমার শরীরে ককটেল ছুড়ে মারে। কিন্তু ককটেলটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় প্রাণে বেঁচে গেছি।’
মালোপাড়ায় প্রথম হামলা ও গুজব: মারধরের ঘটনার পর বেলা আড়াইটার দিকে রহিম (৩২) ও বক্কারের (২৫) নেতৃত্বে ৭০-৮০ জন জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কর্মী মালোপাড়ায় গিয়ে পাড়ার লোকজনদের ওপর চড়াও হন। কিন্তু মালোপাড়ার লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে তাঁদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এতে সংঘর্ষ বাধে এবং রহিম, বক্কার, আব্বাস (৩০) ও ওমর (২৮) আহত হন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা পিছু হটেন।
এরপর জামায়াত ও বিএনপির কর্মীরা গুজব ছড়ায়, মালোদের দায়ের কোপে বক্কার নিহত হয়েছেন। সংগঠিত হতে থাকেন জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কর্মীরা।
রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সন্ধ্যার দিকে চাঁপাতলা গ্রামের কাশেম (৩৫), আরিফুল (২৬), কিবরিয়া (৩২) ও মিজানের (৩৮) নেতৃত্বে একটি দল ও চাঁপাতলা গ্রামেরই বদরুলের (৩৫) নেতৃত্বে আরেকটি দল জড়ো হয়। পার্শ্ববর্তী যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের শিবানন্দপুর গ্রাম থেকে একটি দল আসে হেঁটে। অভয়নগর উপজেলা জামায়াতের আমির আবদুল আজিজের ছেলে উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ (৩০), তাঁর বড় ভাই মাহামুদ (৩৫) ও ভগ্নিপতি সাইদুলের (৩৫) নেতৃত্বে ইঞ্জিনচালিত তিনটি ভ্যানে (করিমন) করে আসেন সবচেয়ে বড় দলটি। সব মিলে ২৫০ থেকে ৩০০ নেতা-কর্মী রামদা, হকিস্টিক, লোহার রড, লাঠি ও বোমা নিয়ে মালোপাড়ায় অতর্কিত হামলা চালান। তাঁরা ১০-১৫টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। আতঙ্কিত লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে থাকে। এ সময় তাঁরা শতাধিক বাড়িঘরে ভাঙচুর এবং ঘরে থাকা সমুদয় মালামাল লুটপাট করেন। ১০টি বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন।
হামলায় সুনীল বিশ্বাস (৫০), কমল সরকার (৪৫), সুশীল সরকারসহ (৪০) অন্তত ২০ জন আহত হন। গুরুতর আহত ছয়জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ সময় আতঙ্কিত চার শতাধিক নারী-পুরুষ-শিশু পার্শ্ববর্তী ভৈরব নদ সাঁতরে ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পার হয়ে দেয়াপাড়া গ্রামের পালপাড়া এলাকার পূজামণ্ডপে আশ্রয় নেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হামলায় চাঁপাতলা গ্রামের হুমায়ুন (২৮), কিবরিয়া (৩২), মিজান (৩৮), মনিরুল (২৫), শরিফুল (২৮), জামাল (৩২), ইমামুল (৩০), আজিবর (৩৫), রব্বানী (১৭), মামুন (১৮), বাবু (১৯), বদরুল (৩৫), কাদের (৪২) ও আমির (৩৬); বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মাহফুজ (৩০), মাহামুদ (৩৫) ও সাইদুল (৩৫) এবং শিবানন্দপুর গ্রামের ফয়সাল (৩০), ইমরান (৩২), আলী হোসেন (২৬), মোস্তাক (১৯), নাজমুল (১৮), ইজাহার (২৪), মোয়াজ্জেম (২৪), বাহাজ্জাত (২৮), ইয়াদ আলী (২৮), ইস্রাফিল (১৮), হায়দার (৩৩), মোহিত (২৬) ও সেকেন্দার (২৮) নেতৃত্বদানকারীর ভূমিকা পালন করেন।
হামলাকারীদের মধ্যে মিজান ও কিবরিয়া প্রেমবাগ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অবশিষ্টদের বেশির ভাগ জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মী।
আহত ব্যক্তিদের একজন সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘সন্ধ্যায় আমি বাড়িতেই ছিলাম। হঠাৎ চারদিক দিয়ে পাড়ায় হামলা চালানো হয়। কাশেম লাঠি দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি মারে। তারপর কী হয়েছে আমি আর বলতে পারি না।’
সূত্রগুলো বলছে, চাঁপাতলা গ্রামের জামায়াত-কর্মী বদরুল শিবানন্দপুর এলাকায় জামায়াত-শিবির সংগঠিত করার কাজ করেন। হামলায় একাংশের নেতৃত্ব দেন বদরুল ও তাঁর ভাই কাদের। বদরুলদের আরেক ভাই হাবিবুর রহমান ওরফে হবি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। তবে এঁদের সবার সংসার ভিন্ন।
পুলিশ বদরুলকে আটক করেছে। তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের একটা পক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তবে হাবিবুর রহমান প্রথম আলোর কাছে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি নির্বাচনে রনজিত রায়ের পক্ষে কাজ করেছেন বলে জানান।
ওহাব-বিতর্ক: এই হাবিবুর রহমানকে কেন্দ্র করেই হামলায় ওহাবের লোকজনের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। তবে প্রথম হামলায় আহত আওয়ামী লীগের নেতা বিশ্বজিৎ সরকারও জানিয়েছেন, হাবিবুর রহমান নৌকার পক্ষে নির্বাচন করেছেন। তিনি বলেন, ‘একসময় আমরা সবাই ওহাব সাহেবের লোক ছিলাম। তিনি এখনো আমাদের নেতা। তবে নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় দলের আদর্শ মেনে আমরা সবাই রনজিত বাবুর পক্ষে কাজ করেছি।’ হামলায় ওহাবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে মনে করেন বিশ্বজিৎ।
তবে নির্বাচনের কয়েক দিন আগে ২৮ ডিসেম্বর সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় মাঠে হিন্দুদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক যে বক্তব্য দিয়েছিলেন আবদুল ওহাব, তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বিশ্বজিতের।
সুন্দলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অধীর কুমার পাঁড়ে বলেন, ‘ওহাব সাহেব বলেছিলেন, ‘শুধু জামায়াত-শিবির নয়, এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ও সাম্প্রদায়িক। জাত দেখে নৌকা মার্কায় ভোট দিলে (নৌকা মার্কার প্রার্থী ছিলেন রনজিত রায়) ভবিষ্যতে হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে আমি এগিয়ে আসব না।’
অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল মালেক বলেন, আবদুল ওহাবের এসব বক্তব্যে হামলাকারীরা আশকারা পেতে পারে।
ওহাবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী সাংসদ রনজিত রায় দাবি করছেন, ওহাবের প্রচ্ছন্ন মদদে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি এ কাজ করেছে। তবে এই দুই নেতার কেউই আবদুল ওহাবের কোন অনুসারী হামলায় জড়িত ছিল, তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি।
আবদুল ওহাব নির্বাচনের আগে কোনো রকম উসকানিমূলক বক্তব্য দেননি বলে দাবি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মালোপাড়ার হামলার ঘটনাটি স্পষ্টতই জামায়াত-শিবিরের কাজ। বিএনপিও এতে জড়িত ছিল।’
তাঁর প্রচ্ছন্ন মদদে জামায়াত-শিবির হামলা করেছে—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আবদুল ওহাব বলেন, ‘এটা তো রনজিত রায়ের অভিযোগ। রনজিত এসব বলছেন একদম রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে। জামায়াত-বিএনপির লোকজন আমার কথা শুনতে যাবে কেন? আমি তো কখনো জামায়াতকে প্রশ্রয় দিয়ে রাজনীতি করিনি।’
এগিয়ে আসেনি কেউ: ৫ জানুয়ারি দুপুরে প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার পর নিরাপত্তার জন্য বারবার মুঠোফোনে আওয়ামী লীগের নেতা এবং পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মালোপাড়ার আতঙ্কিত লোকজন। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্যের জন্য কেউই এগিয়ে আসেননি বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। পাড়ার শান্তনু সরকার (৪৫) বলেন, ‘সকালে ভোটকেন্দ্রে এবং দুপুরে পাড়া আক্রান্ত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশের সঙ্গে বারবার মোবাইলে যোগাযোগ করেছিলাম। তাঁরা ওই সময় এগিয়ে এলে সন্ধ্যায় হামলার ঘটনা ঘটত না।’
অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও প্রেমবাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা গাজী হায়দার আলী বলেন, ‘নেতাদের নির্দেশে মালোপাড়ার লোকজনকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ার পর কয়েকজন ভোটকেন্দ্রে যান। এ সময় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাঁদের মারধর করেন। দুপুরেও পাড়ায় আক্রমণ হয়। সন্ধ্যায় তাঁদের ওপর চালানো হলো নারকীয় তাণ্ডব। ওদের নিরাপত্তা দিতে না পারার যন্ত্রণা আমাকে ব্যথিত করেছে।’
অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মালোপাড়া থেকে ফোন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাৎক্ষণিকভাবে থানাকে অবহিত করেছি, কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর আমার পক্ষে শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ওই পাড়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মহত্যার শামিল হতো।’
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানলেও নির্বাচনের কাজে পুলিশ ফোর্সের সবাই ব্যস্ত থাকায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তবে সন্ধ্যার পরপর ওই পাড়ায় পুলিশ পাঠানো হয়।’
মালোপাড়ার বাসিন্দারা অবশ্য বলছেন, ‘সন্ধ্যার পর নয়, পুলিশ এসেছে রাত নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার দিকে এবং ততক্ষণে লুটপাট ও আগুন দিয়ে নিরাপদে চলে গেছে হামলাকারীরা।
তদন্ত: ওসি এমদাদ বলেন, পুলিশের তদন্ত এখনো চলছে। তবে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় যে ৩৯ জনের নাম আছে, তাঁরা সবাই হামলায় অংশ নিয়েছিলেন, এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুজন ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জড়িতদের আরও অনেকের নাম জানিয়েছেন। বাকিদের ধরার জন্য জোর তৎপরতা চলছে।
তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পরিচালিত তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যশোরের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে হামলার জন্য জামায়াত-শিবির ও বিএনপিকে দায়ী করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব হামলাকে সহজতর করেছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।