হিংসা দিয়ে সমস্যার সমাধান হয়নি

গান্ধীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রমে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকীর আলোচনায় অংশ নিয়ে অহিংস উপায়ে যেকোনো সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। গতকাল ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর ১৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রমে ‘অহিংসা, সত্যাগ্রহ এবং মহাত্মা গান্ধীকে স্মরণ’ শিরোনামে এই আলোচনা সভা হয়।

নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম ও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। ২০০৭ সাল থেকে মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকীকে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয় হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আলোচনা সভার বিস্তারিত জানানো হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সামরিক অস্ত্রের বিপরীতে, অহিংস অস্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ সারা বিশ্বে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে, জাতিতে জাতিতে যে বিদ্বেষ, হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে, তা থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস বাণী প্রেরণা জোগায়।’ তিনি বলেন, হিংসা দিয়ে পৃথিবীতে কখনো কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। হিংসা থেকে দূরে রাখাই ছিল মহাত্মা গান্ধীর অন্যতম মূলমন্ত্র। সংঘাতমুক্ত সমাজ, সংঘাতমুক্ত পৃথিবী ও যুদ্ধমুক্ত বিশ্ব গঠনে মানুষকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে মহাত্মা গান্ধীর দর্শন।

সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু যতগুলো আন্দোলন করেছেন, সবই আইনের মধ্যেই করেছেন। অহিংস আন্দোলন শুরু করেছিলেন গান্ধী আর শেষ করেছেন বঙ্গবন্ধু। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহিংসতা দূর করতে জাতিসংঘে কালচার অব পিসের প্রস্তাব করেন। বিশ্বের ১৯৩টি দেশ সেই প্রস্তাবে সমর্থন করেছে।

বঙ্গবন্ধু যতগুলো আন্দোলন করেছেন, সবই আইনের মধ্যেই করেছেন। অহিংস আন্দোলন শুরু করেছিলেন গান্ধী আর শেষ করেছেন বঙ্গবন্ধু।
এ কে আব্দুল মোমেন , পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গান্ধীজির জীবন এবং তাঁর বাণী আজও প্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেন ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। তিনি ২০১৯ সালে মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জাতিসংঘের একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য স্মরণ করেন।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সভাপতি বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর, সাংসদ আরোমা দত্ত, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী টুয়োমা পুটিআইনেন, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর ও ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত

মুখার্জি, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মেজবা উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা সংস্কারকৃত গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন। এ সময় গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং জাদুঘরের প্রদর্শনীর শিল্পকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন তাঁরা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আব্দুল মোমেনও বক্তব্য রাখেন।
ছবি: সংগৃহীত

শান্তি সমাবেশ

অহিংস আন্দোলনের পুরোধা মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শান্তি সমাবেশ করেছে গান্ধী স্মারক সনদ। গতকাল শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে মহাত্মা গান্ধী স্মারক সনদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নাসিফ মকসুদ প্রথম আলোকে বলেন, মহাত্মা গান্ধী চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন শুধু ভারতীয় স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতা হিসেবে নয় বরং অহিংস পদ্ধতিতে যেকোনো অন্যায়–অবিচার ও হানাহানির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কারণে; বিশ্বের মানুষের কাছে অহিংস আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে তিনি চিরকাল শ্রদ্ধাভাজন থাকবেন। তাঁর অহিংস নীতি চিরকাল মানুষকে পথ দেখাবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।
ছবি: সংগৃহীত

শান্তি সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান, গ্রিন ভয়েসের সমন্বয়ক আলমগীর কবির, মো. আবদুল মান্নান, গান্ধী স্মারক সনদের সমন্বয়ক কবির সুমন ও মাসুদুর রহমান।