হেলিকপ্টারেই ঢাকায় নেওয়া হলো সেই শিশুকে

ঢাকায় নেওয়ার উদ্দেশে হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছে শিশুটিকে। ছবি: পান্না বালা
ঢাকায় নেওয়ার উদ্দেশে হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছে শিশুটিকে। ছবি: পান্না বালা

দাফনের আগ মুহূর্তে কেঁদে ওঠা শিশু গালিবা হায়াতকে হেলিকপ্টারে করে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি হেলিকপ্টারে করে শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

শিশুটিকে হেলিকপ্টার ভাড়া করে ঢাকায় নেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসকদের পরামর্শ সত্ত্বেও তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে পারছিল না তার পরিবার। বিষয়টি নিয়ে গতকাল প্রথম আলো অনলাইনে ‘সেই নবজাতককে বাঁচাতে ঢাকায় আনা জরুরি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সোলায়মান সুখন নামের এক ব্যক্তি তাঁর দুই বন্ধুর সহায়তায় হেলিকপ্টারে করে শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শিশুটিকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ফরিদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল দলের প্রধান খন্দকার মো. আবদুল্লাহ হিস সায়াদ শিশুটির সার্বিক শারীরিক পরীক্ষা করেন। হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে শিশুটিকে স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পারটেক্স গ্রুপের একটি ভাড়া করা হেলিকপ্টারে শিশুটিকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়।

নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বর্তমানে ‘আমরা নেটওয়ার্কস’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হেড অব মার্কেটিং সোলায়মান সুখন শিশুটিকে ঢাকায় আনার উদ্যোগ নেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, হাঙ্গেরিপ্রবাসী তাঁর ব্যবসায়ী বন্ধু (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) নবজাতকটিকে নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদ দেখে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি আজ সকালে শিশুটির মা-বাবার ফোন নম্বর পেতে চেয়ে ওই সংবাদটি ফেসবুকে শেয়ার করে একটি পোস্ট দেন। অনেকে সেই পোস্টে সাড়া দিয়ে শিশুটির বাবার ফোন নম্বর পেতে সহযোগিতা করেন।
সোলায়মান সুখন বলেন, ‘আমাদেরও সন্তান রয়েছে। এই শিশুটির ক্ষেত্রে আমাদের সেই আবেগও কাজ করেছে। আমাদের বেশির ভাগ মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে একটি সংবাদ দেখে হা-হুতাশ করে পরমুহূর্তে তা ভুলে যাই। আমার বন্ধু বলছিলেন কিছু একটা করা দরকার বাচ্চাটির জন্য। একটি হেলিকপ্টার এমন কোনো বড় বিষয় তো নয়। তখন আমি আমার পাইলট বন্ধু মতির সঙ্গে যোগাযোগ করি। আবহাওয়া খারাপ ছিল। এরপরও ও (মতি) হেলিকপ্টারটি চালিয়েছে। আমিও সঙ্গে গিয়েছি। এখন আশা করব, স্কয়ার হাসপাতাল যেন শিশুটির চিকিৎসার ব্যয় ভার নেয়। তাহলে সৃষ্টিকর্তা চাইলে আমাদের এ উদ্যোগ সফল হতে পারে। প্রত্যাশা একটাই, শিশুটি যেন বেঁচে থাকে।’
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন করপোরেশনের মার্কেটিং বিভাগের এজিএম সামিউল হক প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে নিয়ে ফেসবুকে সোলায়মান সুখনের স্ট্যাটাস দেখে তিনি শিশুটির বাবার ফোন নম্বর জোগাড় করে দিতে সহায়তা করেন।

শিশুটির সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে তার বাবা নাজমুল হুদা মিঠু, ফুপাতো চাচা শামীমুল হক তালুকদার ও ফরিদপুর শিশু হাসপাতালের নার্স টিটো মণ্ডল ঢাকা যান।
শিশুটির চাচা শামীমুল হক তালুকদার আজ সন্ধ্যা সাতটার দিকে বলেন, হেলিকপ্টারটি ছয়টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।