হোটেল-রেস্তোরাঁয় বৈশাখী খাবারের ধুম

আলপনার রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে হোটেল–রেস্তোরাঁ। ছবিটি গতকাল ধানমন্ডি থেকে তোলা l প্রথম আলো
আলপনার রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে হোটেল–রেস্তোরাঁ। ছবিটি গতকাল ধানমন্ডি থেকে তোলা l প্রথম আলো

প্রচণ্ড দাবদাহে ঘরের বাইরে দুদণ্ড দাঁড়ানোর উপায় নেই। দীর্ঘক্ষণ বসে গল্পগুজব করা তো দূর অস্ত। এর মধ্যে বিকেল পাঁচটার পরে উন্মুক্ত স্থানে থাকবে না বর্ষবরণের কোনো আয়োজন। তাই পয়লা বৈশাখে রাজধানীর বাসিন্দারা হয়তো দল বেঁধে সময় কাটাবেন রেস্তোরাঁয়। এমন ভাবনা থেকেই বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁগুলো সেজেছে বৈশাখী সাজে, ব্যবস্থা করেছে মুখরোচক খাবারের।
এ ছাড়া বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ জাতীয়ভাবে উদ্যাপনের জন্য অভিজাত হোটেল ও ক্লাবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা এবং ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজনের নির্দেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তাই রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোও আয়োজন করেছে বিশেষ অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবারের।
বাঙালি খাবারের জন্য বিখ্যাত পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ বিশেষ খাবারের আয়োজন করেছে। শ্রীশদাস লেনের বিউটি বোর্ডিংয়ে থাকছে ভাত, নানান পদের ভর্তা-ভাজি, মুড়িঘণ্ট, পাঁচমিশালি সবজি ও কয়েক পদের মাছ। হোটেল আল রাজ্জাকে থাকছে ইলিশ খিচুড়ি, চিংড়ি পোলাও। নাজিমউদ্দিন রোডের নীরব হোটেলে বছরজুড়েই দেশি খাবারের নানান পদ থাকে। ভর্তা-ভাজি ও কয়েক পদের মাছ ও মাংসের আয়োজন থাকছে এখানে।
ধানমন্ডি এলাকায় খানিক পরপরই রেস্তোরাঁ। চোখধাঁধানো সাজসজ্জার এসব রেস্তোরাঁ সেজেছে বৈশাখী সাজে। থাইল্যান্ডভিত্তিক চেইন আইসক্রিম পার্লার ক্রিম অ্যান্ড ফাজের ধানমন্ডি শাখায় ঢুকতেই দেখা গেল, ছাদ থেকে ঝুলছে মাটির হাঁড়ি, ঘুড়ি। দেয়ালে টানানো হয়েছে হাতপাখা, বাঘের মুখোশ, ঢোল, কুলা। শাখার ব্যবস্থাপক রিক ভিনসেন্ট বললেন, ‘আগের বছরগুলোতে আমরা নিজেরা সাজাতাম। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীদের দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রচণ্ড গরম আর বিকেলে অনুষ্ঠান না থাকায় নববর্ষের আয়োজন ক্যাফেকেন্দ্রিক হবে বলেই আশা করছি।’
ধানমন্ডির ৯/এ-এর রানা কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ঢোকার সিঁড়িতে আঁকা রঙিন আল্পনা। এখানে থাকছে পান্তাভাত, ভর্তা ও ইলিশ ভাজা, ইলিশ পোলাও ও ইলিশ খিচুড়ি। জনপ্রতি খরচ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা।
ধানমন্ডির ৯ /এ অবস্থিত শর্মা কিং রেস্তোরাঁতে আয়োজন করা হয়েছে ইলিশ পোলাওয়ের, সঙ্গে কোমল পানীয় ও সালাদ। খরচ ৩৪৯ টাকা।
৩৫টি বাঙালি খাবারের পদ দিয়ে সাজানো হয়েছে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের গোল্ডেন স্প্যুন রেস্তোরাঁর ব্যুফে। বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চালু থাকবে এই সুযোগ। জনপ্রতি ৩৯০ টাকা। বাঙালি সাজসজ্জার পাশাপাশি লালমাটিয়ার কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁয় থাকছে পান্তা ইলিশ, ইলিশ পোলাও, ইলিশ খিচুড়িসহ মোট আটটি নতুন পদ। খরচ পড়বে জনপ্রতি ৩৫০-৪০০ টাকার মধ্যে।
পান্থপথের ক্লাউড বিস্ত্রোতে তিন দিনের বর্ষবরণ আয়োজনে থাকছে বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক খাবারের সমাহার। সি-ফুড প্ল্যাটার, কিং প্রন উইথ গ্রিক স্যালাড পানীয়র মধ্যে থাকছে ফায়ার অন আইস, ম্যাঙ্গো কুলার।
ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বনানী, খিলগাঁও, মিরপুর এলাকার রেস্তোরাঁ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেস্তোরাঁগুলো নিজেদের নিয়মিত খাবারের তালিকার বাইরে দেশি খাবারের নানান পদ রাখার চেষ্টা করছে। ইলিশ ভাজা, নানান ধরনের ভর্তা ও সালাদ, চাটনি পয়লা বৈশাখের খাবারের তালিকায় রাখতে চেষ্টা করছেন রেস্তোরাঁর মালিকেরা।
বৈশাখী আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত নগরের অভিজাত হোটেলগুলোও। লা মেরিডিয়ান হোটেলে সাজসজ্জা ও খাবার পরিবেশনে দেশি ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। থাকছে বাউলগানের আসর, লোকজ মেলা ও তাদের বিভিন্ন দেশি পাচকের হাতে তৈরি দেশি খাবারের সমাহার।
হোটেল সারিনা আয়োজন করেছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। এ ছাড়া থাকছে ১০ দিনের বাংলা খাদ্য উৎসব। চৈত্রসংক্রান্তির দিন অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল শুরু হওয়া বৈশাখী মেলায় থাকছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, কারুশিল্প, বাঁশ, বেত, কাঠ, পাট ও চামড়াজাত পণ্যের সমাহার। থাকছে মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, হাওয়াই মিঠাইসহ অনেক কিছু।
হোটেল আমারির আমায়া ফুড গ্যালারিতে সকাল, দুপুর ও রাতের আয়োজনে থাকবে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবারের সমারোহ।