১০ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ৬৬ কিমি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড-মিরসরাইয়ে ৯ মাসে ২৩২টি দুর্ঘটনা, নিহত ৬৮ জন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড-মিরসরাই অংশের ৬৬ কিলোমিটারে দুর্ঘটনা থামছে না। গত ৯ মাসে চট্টগ্রামের সিটি গেট থেকে মিরসরাইয়ের ধুমঘাট পর্যন্ত অংশে ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৩২টি। হাইওয়ে পুলিশের হিসাবে এতে নিহত হয়েছেন ৬৮ জন। অথচ মহাসড়কের এই অংশে কোনো বাঁক নেই। এরপরও একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলছে।

মহাসড়কের এই অংশে ১০ কারণে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ। কারণগুলো হচ্ছে, ক্লান্তি ও ঘুম নিয়ে চালকদের গাড়ি চালানো, উল্টো পথে গাড়ি চলাচল, ইউটার্নে অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি ঘোরানো, মহাসড়কের ওপর যেখানে–সেখানে গাড়ি রাখা, নিয়ম না মেনে পথচারীদের রাস্তা পারাপার, পাল্লা দিয়ে গাড়ি চলাচলে প্রতিযোগিতা, সড়ক ঘেঁষে বাজার ও গুদাম, সংযোগ বা পাশের সড়ক থেকে হঠাৎ গাড়ি চলে আসা, সড়কে আলোর স্বল্পতা এবং চলন্ত অবস্থায় গাড়ির যন্ত্রাংশ বিকল হওয়া।

* দুর্ঘটনার ৮০ শতাংশ ভোর কিংবা মধ্যরাতে ঘটে বলে জানায় হাইওয়ে পুলিশ। * ঝুঁকিপূর্ণ এই অংশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় নেই ট্রমা সেন্টার।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বলেন, প্রতিটি ইউটার্নে ট্রাফিক পুলিশ রাখা এবং পথচারীদের রাস্তা পারাপারে শৃঙ্খলা আনা গেলে দুর্ঘটনার হার অর্ধেক কমে যাবে।

আজ ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি’।

২৫ স্থান দুর্ঘটনাপ্রবণ

হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম অংশে কমবেশি সব জায়গাতে দুর্ঘটনা ঘটে। তবে ২৫টি এলাকায় দুর্ঘটনার প্রবণতা বেশি। এর মধ্যে মিরসরাইয়ের ধুমঘাট সেতু, বারৈয়ারহাট, বিএসআরএমগেট, সোনাপাহাড় বিশ্বরোড, মিঠাছড়াবাজার ইউটার্ন, সুফিয়া রোড, বড়তাকিয়া বাজার, সীতাকুণ্ডের বড়দারোগা হাট, ছোটদারোগা হাট ও ফৌজদারহাট-বন্দর সড়কের সংযোগস্থল উল্লেখযোগ্য।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, সীতাকুণ্ডের চারালকান্দি পিএইচপি গেট এলাকায় ইউটার্নে একটি লরি দাঁড়িয়ে ছিল। পৌর সদরের ফকিরহাট গরুর বাজার এলাকায় গরু নিয়ে আসা বেশ কটি মিনি ট্রাক রয়েছে রাস্তার ওপর। এ ছাড়া ছোট কুমিরা এলাকায় দুটি ট্রাকের ফুটো হওয়া চাকা পরিবর্তন করতে দেখা গেছে রাস্তার ওপর।

দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় শৃঙ্খলা ফেরাতে নিয়মিত মামলা ও জরিমানা করা হয় বলে জানান কুমিরা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. আমীর ফারুক। এ ছাড়া স্পিডগানে গাড়ির গতিও মাপা হয়।

দুর্ঘটনার তথ্যে গরমিল

দুর্ঘটনার তথ্য নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য, গত বছর মোট দুর্ঘটনা ছিল ২৪২টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৪৮ জন ও আহত হন ২৭৯ জন। এ বছর ৯ মাসে দুর্ঘটনার সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩২টিতে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪২ জন ও আহত হয়েছেন ৩০৫ জন।

হাইওয়ে পুলিশের তথ্যে গত বছর মাত্র ৪৩টি দুর্ঘটনা দেখানো হয়েছে। এতে নিহত হয়েছিলেন ৪৩ জন। চলতি বছরের ৯ মাসে দুর্ঘটনা হয়েছে ৬৩টি। এতে নিহত ৬৮ জন।

তথ্যের গরমিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি মীর নজরুল ইসলাম বলেন, যেসব দুর্ঘটনায় মামলা হয়, সেগুলোই কেবল হিসাব রাখা হয়। ফলে নথিভুক্ত হওয়ার বাইরেও দুর্ঘটনা থাকতে পারে।

মৃতের সংখ্যার হিসাব কম হওয়ার ব্যাপারে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, ফায়ার সার্ভিস তাৎক্ষণিক হতাহতের ঘটনা লিপিবদ্ধ করে। হাসপাতালে কেউ মারা গেলে তার হিসাব থাকে না।

নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ এই অংশে অবশ্যই একটি ট্রমা সেন্টার থাকা প্রয়োজন। এই সেন্টার না হওয়া পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দুর্ঘটনার শিকার রোগীদের জন্য চিকিৎসা উপযোগী আলাদা ইউনিট করা উচিত।