মানবিক বিভাগে তিনজন ও অধ্যক্ষসহ বিজ্ঞান বিভাগে দুজন শিক্ষক দিয়েই শ্রেণি পাঠদানসহ প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চলছে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া সরকারি শাহ-এয়তেবারিয়া কলেজটির। ১৪টি পদের ১০টিতে শিক্ষক নেই। বিজ্ঞানের প্রদর্শক নেই, কর্মচারীর ১৬টি পদের ১১টিই শূন্য। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজটি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৮৮ সালে সরকারি হয়। কলেজে একাদশ শ্রেণির ১১৮ জন ও দ্বাদশ শ্রেণির ১১৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বাণিজ্যিক বিভাগে কোনো শিক্ষক না থাকায় গত বছরে ছয়জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। ইন্টারমিডিয়েটে এ কলেজে শিক্ষকের ১৪টি পদ। এর মধ্যে অধ্যক্ষ, বাংলার একটি পদে এবং ইংরেজি, অর্থনীতি ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষক আছেন। কিন্তু বাংলার একটি পদ, আইসিটির একটি পদ, পৌরনীতির একটি পদ, ইসলামের ইতিহাসের একটি পদ, যুক্তিবিদ্যার একটি পদ, গণিতের একটি পদ, রসায়নের একটি পদ, জীববিদ্যার একটি পদ, হিসাববিজ্ঞানের একটি পদ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের একটি পদে শিক্ষক নেই। বিজ্ঞান বিভাগের প্রদর্শকের তিনটি পদই শূন্য। করণিকের তিনটি পদ, অফিস সহকারীর একটি পদ, হিসাবরক্ষকের একটি পদ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের একটি পদ, গ্রন্থাগারিকের একটি পদ ও পিয়নের চারটি পদ শূন্য রয়েছে।
কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বারবার শিক্ষক চেয়েও দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা শিক্ষক পাচ্ছেন না। শিক্ষকসংকটে প্রতিদিনই শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাস করাতে হিমশিম খেতে হয়। সরকারি পরিপত্রে আছে, কোনো পদে একাধিক শিক্ষক থাকলে অন্যত্র বদলি নিতে পারবেন। কিন্তু এ কলেজে কোনো শিক্ষক যোগদান করে সুযোগ পেলেই আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। এ জন্যই দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকের পদ শূন্য।
পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আর আমি একই বিষয়ের শিক্ষক। উনি প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে ক্লাস নেন। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগের সব ক্লাসই আমাকে নিতে হয়। আবার ব্যবহারিক ক্লাসও করতে হয়। এভাবে তো কলেজ চলে না। শিক্ষার্থীদের মুখের দিকে তাকিয়ে যতটুকু করা যায়, এর বেশি কী আর বলব।’
সম্প্রতি কলেজে গিয়ে কথা হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। এ সময় শ্রেণিকক্ষের সামনে দাঁড়ানো একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলে, ‘ক্লাসের রুটিন আছে। কিন্তু সে মোতাবেক ক্লাস হয় না। বিভিন্ন বিষয়ের স্যার নেই।’ গ্রন্থাগারের সামনে বসে থাকা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলে, ‘কলেজে কোনো ক্লাসই সময়মতো শুরু হয় না।’
কলেজের অধ্যক্ষ শামীমা ফেরদৌস বলেন, ‘আমি সবেমাত্র এ কলেজে যোগদান করেছি। একসময় এ কলেজে কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষক ছিলেন। মফস্বলে সরকারি কলেজ হওয়ায় শিক্ষকেরা এসে বেশি দিন থাকতে চান না। নতুন শিক্ষক যোগদান করেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে হরহামেশাই বদলি নিয়ে অন্যত্র যাওয়ায় আজ কলেজের এ দুর্দশা। বিষয়টি বারবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এরপরও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় তিনজন ছেলেকে খণ্ডকালীন হিসেবে ক্লাস করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের সম্মানী পর্যন্ত দিতে পারি না।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সরকারি কলেজ হলেও পরীক্ষাকেন্দ্র নেই এখানে।