১৪ বছরের নিচের ৮২ শতাংশ শিশু নির্যাতনের শিকার

দেশে ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৮২ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুরা সাধারণত নিজ বাড়িতে, স্কুলে ও কর্মক্ষেত্রে বেশি নির্যাতন বা সহিংসতার শিকার হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার ‘আমিই পারি শিশুর প্রতি শারীরিক সহিংসতা বন্ধ করতে’ শিরোনামে ক্যাম্পেইন পরিচিতি অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শারীরিক সহিংসতা বা নির্যাতন বলতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বল প্রয়োগ করে যেকোনো ধরনের শারীরিক আঘাত প্রদান বা আঘাত প্রদানের অভিপ্রায়কে বোঝায়। এতে বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় প্রায় ৫৭ শতাংশ শিশু। আর বিদ্যালয়ে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার প্রায় ৭৭ শতাংশ শিশু। শিশুর প্রতি সহিংসতা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

>নিজ বাড়িতে, স্কুলে ও কর্মক্ষেত্রে বেশি নির্যাতন বা সহিংসতার শিকার হয় শিশুরা

অনুষ্ঠানে বলা হয়, বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা গেছে, পরিবারের কর্তাদের যখন কোনো কাজ বা আয় থাকে না, তখন তাঁরা বিষণ্নতায় ভোগেন—শিশুদের শারীরিকভাবে অত্যাচার করেন। পাশাপাশি, অভিভাবকদের ধারণা, শিশুদের সঠিকভাবে মানুষ করার জন্য ‘মার’ দেওয়া যেতে পারে। ঘর, বিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র—তিনটি ক্ষেত্রেই শিশুরা সহিংসতার শিকার হয়। এর মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে মা-বাবার হাতে নির্যাতন তথা খুন এবং শিক্ষকদের দ্বারা নির্যাতনের ঘটনা। কর্মক্ষেত্রেও তারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। প্রতিবন্ধী শিশুদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি দ্বিগুণ। শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে দরকার সচেতনতা ও আইনের প্রয়োগ।
অনুষ্ঠানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এক মা বলেন, স্বামীকে অনেক বুঝিয়েও তাঁর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে পারছিলেন না। স্বামীর যুক্তি, বাচ্চার ভালোর জন্যই তাকে মারা হয়। কোনো উপায় না পেয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিয়ে বাচ্চাকে সুরক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেন, শিশুদের অধিকার রক্ষায় প্রতিবাদী হতে হবে। আর এটা শুরু করতে হবে ঘরেই।
আলোচনায় শিশু মেঘলা আক্তার বলে, সরকার এমন একটি আইন তৈরি করুক, যার ভয়ে মানুষ শিশুদের নির্যাতন করতে ভয় পাবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ ধারা মেয়েদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে সর্বোত্তম ক্ষতির কারণ যেন না হয়।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর ফ্রেড উইটিভিন বলেন, ‘আমাদের উচিত শিশুদের প্রতি যত্নবান হওয়া ও তাদের ভালোবাসা। অথচ আমরা তাদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন চালাই, তাদের অধিকার লঙ্ঘন করি।’
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুল মান্নান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুক মিয়া, ওয়ার্ল্ড ভিশনের উপপরিচালক শাবিরা নূপুর প্রমুখ বক্তব্য দেন।