হবিগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ীদের শায়েস্তা করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তারের পর জেল খেটে বের হয়ে আবারও একই কাজে নামেন চোরাকারবারিরা। সামাজিকভাবে চাপে ফেলতে তাঁদের বাড়ির সামনে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে বিজিবি। তাতে লেখা, ‘চোরাকারবারির বাড়ি’, ‘মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি’।
গত এক সপ্তাহে বিজিবি–৫৫ ব্যাটালিয়ন মাধবপুর, চুনারুঘাট ও শ্রীমঙ্গল সীমান্ত এলাকায় ১৫০ জন চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ির সামনে ওই সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে। তবে বিজিবির এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। কেউ কেউ একে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলছেন।
জাতীয় মানবাধিকার সমিতি হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও আইনজীবী আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, অপরাধ যে কেউ করতে পারে। অপরাধের জন্য প্রচলিত আইন আছে, শাস্তি হবে। তাই বলে অভিযুক্তের বাড়িতে এ ধরনের সাইনবোর্ড লাগানো মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাছাড়া ওই বাড়িতে শিশু নারীসহ অন্যরা বসবাস করেন। তারা সবাইতো এ অপরাধে জড়িত না। কাজেই বিষয়টি ভালো করে বিবেচনায় নিয়ে কাজটি করা উচিত ছিল বিজিবির।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের মাধবপুর, চুনারুঘাট ও পাশের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছু দিন ধরে চোরাকারবারি ও মাদক পাচারকারী দলের একটি বড় চক্র গড়ে উঠেছে। এ চক্রের সদস্যরা নানা সময় চোরাই মালামাল ও মাদকসহ আটক হয়েছেন। তাঁরা কারাভোগের পর এলাকায় এসে আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। হবিগঞ্জ বিজিবি–৫৫ ব্যাটালিয়নের অধীনে তিনটি সীমান্ত এলাকায় এ রকম ১৫০ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেককে এ অপরাধ ছেড়ে দিয়ে ভালো পথে আনার নানা উদ্যোগও নেয় বিজিবি। এর অংশ হিসেবে ওইসব ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে তাঁদের বোঝানো হয় অপরাধ ছেড়ে সৎ পথে আসতে। কিন্তু কোনোভাবেই তাঁদের ফেরানো যায়নি। অবশেষে তাঁদের বাড়ির সামনে ওই সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হলো।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মাধবপুর উপজেলার রামনগরের ধনু মিয়া, কাউছার মিয়া, জয়নাল মিয়ার বাড়িতে এ ধরনের সাইনবোর্ড টানানো দেখতে পান এলাকাবাসী। লালের ওপর সাদা রং দিয়ে লেখা ‘মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি’, ‘চোরাকারবারির বাড়ি’—সাইনবোর্ডগুলো সবার দৃষ্টি কাড়ছে। অনেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টানানো সাইবোর্ড দেখছেন।
রামনগরের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমরা এলাকাবাসী ও বিজিবি অনেক চেষ্টা করেছি অপরাধীদের ভালো পথে আনতে। কিন্তু তাঁরা নিজেদের সংশোধন করেননি। এখন আশা করা যায়, তাঁরা মন পরিবর্তন করবেন।’
বিজিবি-৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এস এন এম সামীউন্নবী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্তে মাদকসহ বিভিন্ন চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িতদের তাঁরা একটি তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকার অনেকেই চোরাই মালামালসহ আটক হন। দেখা গেছে, কারাভোগের পরও তাঁরা একই অপরাধে জড়িত হন। তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজিবি সদস্যরা অনেক বুঝিয়েছেন এ পেশা ছেড়ে আসতে। তারপরও তাঁরা একই অপরাধ করে চলেছেন। অনেকের বিরুদ্ধে পুনরায় মামলা হয়েছে। কেউ কেউ পলাতক। এসব ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে চাপে ফেলতেই গত এক সপ্তাহে তাঁরা ১৫০ জন চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে এ ধরনের সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন। এসব ব্যক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে সাইনবোর্ডগুলো খুলে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।