১৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

  • এ বছরের প্রথম ৬ মাসে সারা বিশ্বে ৪৪ কোটি পর্যটক কমেছে।

  • ৪ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার হারিয়েছে বিশ্ব পর্যটন খাত।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতপ্রথম আলো ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট থেকে পাস করে বেরিয়ে ২০১০ সালে মেঘদূত ট্যুরিজম শুরু করেছিলেন খন্দকার জহিরুল আলম। ধীরে ধীরে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও পর্যটক নিয়ে যেতে থাকেন। করোনার ধাক্কা সামলাতে না পেরে গত জুনে গুলশানের কার্যালয়টি বন্ধ করে দেন তিনি। এখন মালিবাগের ছোট একটি কামরা নিয়ে আবার শুরু করেছেন।

মেঘদূত ট্যুরিজমের মতো ৬৭৮টি প্রতিষ্ঠানের সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)। নানাভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন টোয়াবের সদস্যরা। টোয়াব বলছে, এ বছর শুধু তাদের সদস্যদের ক্ষতি ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তবে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপটার বলছে, পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব খাত মিলে এক বছরে ক্ষতি হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা।

জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা বলছে, গত বছর ১৫০ কোটি পর্যটক বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। এ বছরের প্রথম ৬ মাসে এটি ৬৫ শতাংশ কমেছে। এ সময় সারা িবশ্বে ৪৪ কোটি পর্যটক কমেছে। আর ৪ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার হারিয়েছে বিশ্ব পর্যটন খাত। অর্থনৈতিক মন্দায় ২০০৯ সালে ক্ষতির চেয়ে এবার পর্যটন খাতে ৫ গুণ বেশি ক্ষতি হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দেব দেশের পর্যটনে করোনার প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আগের বছরের চেয়ে আয় কমতে পারে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত। দেশের পর্যটন খাতে ১৮ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।

আগের বছরের চেয়ে আয় কমতে পারে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত। দেশের পর্যটন খাতে ১৮ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।
সন্তোষ কুমার দেব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক

পর্যটন খাতে করোনার প্রভাব মূল্যায়ন করে পাটা বাংলাদেশ বলছে, জুন পর্যন্ত পর্যটন খাতে ক্ষতি ৯ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে বছর শেষে এটি ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সেপ্টেম্বর থেকে স্থানীয় পর্যটন চালু হওয়ায় ক্ষতি কিছুটা কমলেও তা তেমন বেশি নয়।

পাটা বাংলাদেশের মহাসচিব তৌফিক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অভ্যন্তরীণ পর্যটন থেকে টোয়াব সদস্যদের অতটা আয় নেই। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যটক ট্যুর অপারেটর ছাড়াই ভ্রমণ করে। বিদেশিরা আপাতত আসবেন না, দেশি পর্যটকও বিদেশে যাবেন না। তাই শীতের ভ্রমণ মৌসুমেও এবার কোনো আয়ের সম্ভাবনা নেই।

টোয়াব বলছে, দেশে মার্চে করোনার সংক্রমণ শুরু হলেও গত জানুয়ারি থেকে পর্যটন বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের ভেতরে যাঁরা এখন বেড়াচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশই ট্যুর অপারেটরদের গ্রাহক নন। আগামী জুনের আগে কোনো আশা নেই পর্যটন খাতে। আর ২০২২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না পাটা বাংলাদেশ চ্যাপটারের মহাসচিব। এ সময়ে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও সীমান্তবর্তী দেশের সঙ্গে পর্যটনে গুরুত্ব দিতে হবে।

টোয়াবের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মালিকেরা নিজেদের সম্পদ বিক্রি করে পরিচালন ব্যয় চালিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষ কর্মী হারানোর ভয়ে বেতন দিয়ে কর্মীদের ধরে রাখছেন। বারবার দাবি জানালেও সরকারের কাছ থেকে কোনো সহায়তা বা প্রণোদনা পাচ্ছেন না তাঁরা।

টিকিট কাটায় জড়িত ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন আটাবের মহাসচিব মো. মাযহারুল এইচ ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, খুবই সীমিত পরিসরে কিছু উড়োজাহাজ সেবা চালু হয়েছে। শিগগির ব্যবসা স্বাভাবিক হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।

গতকাল শনিবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে সেবা খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। পর্যটন খাতও তার আওতায় আছে। ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীদের ঋণ নিতে হবে। এ ছাড়া তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ জনসাধারণকে পর্যটনে সম্পৃক্ত করতে ও তাঁদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য ট্যুরিজম বোর্ড কাজ করছে।