২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারিত হয়

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতা ঘোষণার দুটি ভাষ্য প্রচারিত হয়েছিল। এ সত্য সন্দেহাতীত। এটিই স্বাধীনতার ঘোষণা। তবে ৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতা আন্দোলনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সময়’ শীর্ষক বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতায় ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এ কথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নিমতলীতে সোসাইটির মিলনায়তনে এই বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। কিন্তু তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা সর্বত্র প্রচারিত হয়। তিনি ওই ঘোষণা প্রচারের স্বপক্ষে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, জিয়া তাঁর জীবদ্দশায় কখনো নিজেকে ঘোষক বলেননি। তিনি ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে দুটি বক্তব্য দেন। তাঁর সেদিনের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটাকে ও বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে সমমর্যাদায় বসানোর কোনো সুযোগ নেই।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের খারাপ সম্পর্কের কারণ নিয়েও কথা বলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, তাজউদ্দীনকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে আত্মীয়, রাজনৈতিক সহকর্মীসহ বিভিন্ন মহলের অপপ্রচারের কারণে এই দুই নেতার মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মোশতাক আহমেদ বেগম মুজিবকে বলেছেন, তাজউদ্দীন চায়নি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পাক। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আরও বলেন, তাজউদ্দীনকে পদত্যাগে যেভাবে বাধ্য করা হয়েছিল তাতে মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর কৃতিত্বের কোনো মূল্য দেওয়া হয়নি। তবে তাজউদ্দীন বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর আনুগত্য আমৃত্যু দেখিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠন প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এটিকে অনেকে দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্যে পরিচালিত একটি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে দেখেন। তবে সারা জীবন যে গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় ব্যবস্থার জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করে এসেছেন, তার সঙ্গে এই একদলীয় ব্যবস্থা যে সংগতিপূর্ণ নয়, সে কথা অনস্বীকার্য। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে তিনি বলতে শুনেছেন, গণতন্ত্র রাখতে পারলে রাখব, তবে সমাজতন্ত্র রাখতেই হবে। তা ছাড়া সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের বিধানটি ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে অযৌক্তিক মনে হবে না। তবে এখন তা নিয়ে নতুন করে বিবেচনা করা যেতে পারে।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অন্য দেশের স্বীকৃতি আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। সংবিধান প্রণয়ন, নির্বাচন দেওয়াও ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে যুদ্ধের পর অস্ত্র ছড়িয়ে গিয়ে মানুষের প্রকৃতির বদল হয়ে গিয়েছিল। অতি বামেরা সহিংস রাজনীতিতে চলে এল, নবগঠিত জাসদ সরকারের শত্রু হিসেবে দেশের পরিস্থিতি অস্থিশীল করে তোলে। রক্ষীবাহিনী শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার পরিবর্তে অসন্তোষের জন্ম দেয়। ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ জাতির জন্য কাল হয়ে দেখা দেয়।
আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষতায় অধিষ্ঠিত করে ইতিহাসকে পেছনের দিকে নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন এশিয়াটিক সোসাইটির সম্পাদক অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী।