
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দ্বিতীয় বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন ‘সোনার বাংলা’ সেভাবে যাত্রীদের আকর্ষণ করতে পারছে না। প্রতি যাত্রায় (ঢাকা-চট্টগ্রাম বা চট্টগ্রাম-ঢাকা) গড়ে ট্রেনটির ৩০ শতাংশের বেশি আসন ফাঁকা থাকছে। যাত্রীরা বলছেন, এই ট্রেনের টিকিটের সঙ্গে খাবারের দাম যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। খাবারের দাম টিকিটের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে কেটে রাখা না হলে এই ট্রেনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
সুবর্ণ চালু হওয়ার প্রায় ১৮ বছর পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দ্বিতীয় বিরতিহীন ট্রেন হিসেবে সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু হয় গত ২৬ জুন। উদ্বোধনী ট্রিপে (যাত্রা) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১৮৭ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে ট্রেনটি। এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে প্রথম বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা বলছেন, সোনার বাংলা এখন দেশের সবচেয়ে আধুনিক ট্রেন। গত ২৬ জুন থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ৪৬টি ট্রিপে সোনার বাংলা ট্রেনটি ২৩ হাজার ৫৭৯ জন যাত্রী পরিবহন করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ১১ হাজার ৫৮৭ জন এবং ঢাকা থেকে ১১ হাজার ৯৯৭ জন যাত্রী ওঠেন। ট্রেনটি গড়ে প্রতি যাত্রায় ৫১২ জন করে যাত্রী পরিবহন করেছে। এটি ট্রেনটির যাত্রী ধারণক্ষমতার ৬৯ শতাংশ। ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টায় কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। আবার বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছায়। পথে শুধু ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেনটি কিছুক্ষণের জন্য যাত্রাবিরতি করে।
‘সোনার বাংলা’ ট্রেনটি শনিবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয় দিন যাত্রী পরিবহন করে। ট্রেনটির ১৬টি বগিতে স্নিগ্ধা (শীতাতপ চেয়ার), শোভন চেয়ার ও এসি বার্থ মিলিয়ে মোট ৭৩৬টি আসন রয়েছে। প্রতি যাত্রায় গড়ে ২২৪ জন বা ৩১ শতাংশ যাত্রী কম পরিবহন করছে ট্রেনটি। অবশ্য ঈদের ছুটির পরের এক সপ্তাহে ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে প্রতি যাত্রায় প্রায় শতভাগ যাত্রী পরিবহন করেছে।
অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের বিরতিহীন আরেকটি ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস গড়ে ৯১ থেকে ৯৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) সরদার সাহাদাত আলী। তিনি বলেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সুবর্ণ ট্রেন গড়ে প্রায় ৯১ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করেছে। জুন মাসে ২৩ দিন রমজান মাস ছিল। রমজান মাসে যাত্রীরা কম ভ্রমণ করেন। তা না হলে গত ছয় মাসে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের গড় যাত্রী পরিবহন ৯৫ শতাংশের বেশি হতে পারত। সুবর্ণ ট্রেনটির আসনসংখ্যা ৮৯৯টি।
সুবর্ণ ট্রেন প্রতিদিন সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছায়। ট্রেনটি আবার রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে বেলা ৩টায় ছেড়ে রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রামে পৌঁছায়। এই ট্রেনটিও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে থামে।
চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দা ও সুবর্ণ ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুবর্ণ এক্সপ্রেস আমাদের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি ট্রেন। সোনার বাংলা উন্নত মানের হলেও ভাড়া সুবর্ণের চেয়ে অনেক বেশি। ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনা উচিত।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, সোনার বাংলার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার টাকা। কিন্তু সুবর্ণের ভাড়া ৭২৫ টাকা। সোনার বাংলার এসি বার্থের ভাড়া ১ হাজার ১১০ টাকা এবং শোভন চেয়ারের ভাড়া ৬০০ টাকা। সুবর্ণের এসি বার্থ নেই। তবে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৮০ টাকা। সুবর্ণ এক্সপ্রেসে যাত্রীদের খাবার সরবরাহ করা হয় না।
চট্টগ্রামের আরেক যাত্রী সামিউল হক বলেন, সোনার বাংলা ট্রেনের টিকিটের দাম থেকে খাবারের দাম আলাদা করা উচিত। খাবারসহ ও খাবার ছাড়া—দুই ধরনের টিকিটের ব্যবস্থা রাখা উচিত।
খায়রুল আলম নামের এক যাত্রী গত এক মাসে সোনার বাংলায় দুবার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, খাবারের মান মোটামুটি ভালো। তবে একদিন কাটলেট বাসি ছিল।
যাত্রীরা বলেন, সোনার বাংলা ট্রেনে দেওয়া খাবারের মধ্যে থাকে ভেজিটেবল স্যান্ডউইচ, চিকেন ফ্রাই অথবা কাটলেট, এক পিস কেক, আপেল ও এক বোতল পানি বা কোমল পানীয়। খাবার সরবরাহ করছে পর্যটন করপোরেশন। কিন্তু খাবারের প্যাকেটে মেয়াদের তারিখ উল্লেখ থাকে না।
এ বিষয়ে পর্যটন করপোরেশনের আবাসিক ব্যবস্থাপক এ এন এম জিয়াউল করিম বলেন, আগের প্যাকেটে খাবার সরবরাহ হচ্ছে। নতুন করে প্যাকেট বানানো হলে খাবারের মেয়াদের তারিখ উল্লেখ থাকবে। বাসি খাবার সরবরাহ করা নিয়ে এক যাত্রীর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, রাত দুইটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত খাবার তৈরি করে ভোর ছয়টায় ট্রেনে সরবরাহ করা হয়।
সোনার বাংলা ট্রেনে যাত্রী কম হওয়ার বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফিরোজ সালাহ উদ্দিন বলেন, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক ট্রেন। এখনো সেভাবে প্রচার পায়নি। অনেক যাত্রী ট্রেনটির যাত্রার সময়সূচি সম্পর্কে জানেন না। যাত্রীরা ধীরে ধীরে ট্রেনটি সম্পর্কে জানছেন। কিছুদিনের মধ্যেই ট্রেনটি জনপ্রিয়তা পাবে। তিনি বলেন, ‘আগামী ছয় মাস পর আপনি এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলবেন, তখন কোনো আসন ফাঁকা থাকবে না। ট্রেনটিতে শিগগিরই ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়া হবে।’