প্রায় ৩৩ শতাংশ মুসলমান নারী উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমির বদলে টাকা পান। এই টাকাও জমির চলতি বাজারমূল্যের ৪০ শতাংশ। উত্তরাধিকার আইনে নারীর ভূমি অধিকারের বিষয়ে একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণাটি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল সোমবার ‘নারীর ভূমি অধিকার ও বঞ্চনা: প্রেক্ষিত উত্তরাধিকার আইন’ শীর্ষক সেমিনারে গবেষণাটির ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সাতটি বিভাগের ১২ জেলায় মুসলিম, হিন্দু, চাকমা, গারো ও সাঁওতাল পরিবারের মধ্যে গবেষণাটি করা হয়। পরিমাণগত এবং গুণগত গবেষণার জন্য মোট ৫০৯টি নমুনা নেওয়া হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, দেশের গ্রামীণ এলাকায় মোট জমির মাত্র ৪ শতাংশে নারীর কার্যকর মালিকানা রয়েছে। কার্যকর মালিকানা বলতে জমির দলিল থাকা, জমি ব্যবহার, জমি বিক্রি ও জমি থেকে পাওয়া আয় কীভাবে ব্যবহার হবে, সেটির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকাকে বোঝানো হয়েছে। জমির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মুসলমান নারীর তুলনায় হিন্দু, চাকমা ও সাঁওতাল নারীরা অনেক বেশি বঞ্চিত। মুসলিম ও অমুসলিম নারীদের উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে ধারণা নেই। তবে তাঁদের অধিকাংশই মনে করেন, তাঁরা বঞ্চিত। সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সীমা জামান বলেন, ‘উত্তরাধিকার আইনে যতটুকু দেওয়া আছে, ততটুকু্ আমরা পাই কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের সচেতন করতে হবে। অবশ্য হিন্দু নারীদের জমির মালিকানা প্রতিষ্ঠায় আইন সংস্কার করা ছাড়া উপায় নেই।’
তবে ভূমিতে নারীর মালিকানা নিশ্চিত করতে আইনের বাইরে নারীর সামাজিক ক্ষমতায়নকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সাংবাদিক আবু সাঈদ খান। তিনি বলেন, ‘প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নারীর ক্ষমতায়নে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনও গড়ে তুলতে হবে।’
এই আন্দোলন শুধু নারীদের বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাদেকা হালিম। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায়ন হয়নি দেখেই নারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। জরিপে দেখানো হয়েছে, ভূমির মালিকানার দিক থেকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদে আছেন গারো নারীরা। অথচ তাঁরাও ঢাকায় এসে বিউটি পারলারে বা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। নারীর ক্ষমতায়ন একটি সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন।’
সভাপতির বক্তব্যে এএলআরডির চেয়ারপারসন খুশী কবির বলেন, ‘দেশে অভিন্ন পারিবারিক আইন খুবই প্রয়োজন। পূর্বে এর উদ্যোগ নেওয়া হলে সব ধর্মের পুরুষই তাতে বাধা দিয়েছিলেন। সময় এসেছে উত্তরাধিকারে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠাকে নারী-পুরুষ যৌথভাবে আন্দোলনের ইস্যু হিসেবে এগিয়ে নেওয়ার। প্রয়োজন সচেতনতার।’