৫০০ চাতাল বন্ধ, বেকার ৭ হাজার শ্রমিক

চুয়াডাঙ্গায় এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে চারটি উপজেলায় প্রায় ৫০০ চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চাল উৎপাদনে জড়িত দৈনিক ২০০ টাকা হাজিরার প্রায় সাত হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
এসব চাতালে সেদ্ধ ও শুকাতে না পারায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ টন ধান।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা পর্যবেক্ষণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের গতকাল শুক্রবার সকাল নয়টা দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তার দাবি, ২০০৮ সালের পর এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। সমুদ্রে লঘুচাপের জন্য এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
জেলা চালকল মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, এবারের বর্ষণে চাতাল ও চালকলের মালিকদের প্রত্যেককে গড়ে দুই লাখ হিসাবে প্রায় ১০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জীবননগর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও সদর উপজেলায় খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত চালকল ও চাতালের সংখ্যা ১৬৭। তবে চালকল মালিক সমিতির হিসাবে, নিবন্ধনের বাইরে আরও তিন শতাধিক ছোট-বড় চাতাল রয়েছে। এসব চাতালের প্রতিটিতে সাধারণত ১০ থেকে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করে থাকেন। কোনো কোনো চাতালে এর বেশিও শ্রমিক আছেন। টানা বৃষ্টিতে চাল উৎপাদন বন্ধ থাকায় মালিকের পাশাপাশি এসব চাতালের প্রায় সাত হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
কয়েকজন চাতালমালিক বলেন, প্রতিটি চাতালেই বিপুল পরিমাণ ধান ভেজা ও সেদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। শুকানোর অপেক্ষায় রাখা সেদ্ধ ধান পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। রোদ উঠলে এসব ধান শুকানো হলেও তা মানুষের খাওয়ার উপযোগী থাকবে না। পশুখাদ্য হিসেবে তা বিক্রি করতে হবে। চাতালনির্ভর ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই খারাপ। এবার চাল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লোক পুঁজি হারিয়ে পথে বসবেন।
সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ মোকামের চাতালমালিক জহুরুল ইসলাম বলেন, তাঁর চাতালে ১২৯ মণ সেদ্ধ ধান পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা আছে। ভেজানো আছে প্রায় সমপরিমাণ ধান। বৃষ্টির কারণে তাঁর চাতালের ১৪ জন শ্রমিক বেকার সময় কাটাচ্ছেন। চলতি বর্ষণে তাঁকে অন্তত দেড় লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে লোকসানও বেড়ে যাবে।
জীবননগরের পেয়ারাতলায় অবস্থিত আলাউদ্দিন রাইচ মিলের মালিক তরিকুল ইসলাম জানান, তাঁর মালিকানাধীন তিনটি চাতালে ৭০০ মণ সেদ্ধ ধান রয়েছে। ভেজানো রয়েছে তারও বেশি। বৃষ্টির কারণে তিনটি চাতালের ৩১ জন শ্রমিক অলস সময় কাটাচ্ছেন।
তরিকুলের চাতালে কাজ করেন শ্রমিক আজগার আলী ও তাঁর স্ত্রী মুসলিমা খাতুন। আজগার বলেন, ‘পানির কারণে গ্যালো কয়দিন ধরে বেকার হয়ে পড়িচি। ধার-দিনা করে সুংসার চালাতি হচ্চে।’ অন্য শ্রমিকদেরও একই অবস্থা। মালিকদের কাছ থেকে আগাম শ্রমমূল্য নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল ওয়াহেদ প্রথম আলোকে জানান, চলতি বোরো সংগ্রহ মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ১৬৯ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এ পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন সংগ্রহ করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে সংগ্রহ অভিযান সাময়িকভাবে ব্যাহত হবে।