৮ মাসেও ব্যক্তিপর্যায়ে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা শুরু হয়নি

ফাইল ছবি: রয়টার্স

করোনার অ্যান্টিবডি পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয় চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি। এর দেড় মাস পর ১১ মার্চ সরকারি ও বেসরকারি খাতে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার নির্দেশিকাও অনুমোদন দেয় সরকার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনুমতি দেওয়ার আট মাস পরও দেশে ব্যক্তিপর্যায়ে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা শুরু হয়নি। করোনা থেকে যাঁরা সুস্থ হয়েছেন বা করোনার টিকা নিয়েছেন, তাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, তা অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়।

অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় নমুনা হিসেবে ব্যবহৃত হয় রক্ত। এতে সময় লাগে ১০ থেকে ৩০ মিনিট। দেশে বর্তমানে সীমিত পরিসরে শুধু গবেষণার কাজে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা হচ্ছে। করোনার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা এখনো চালু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারের উচিত ব্যক্তিপর্যায়ে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা অনুমোদন দেওয়া।

একজন ব্যক্তি করোনার টিকা নিয়েছে, সে জানতে চাইবে অ্যান্টিবডি হয়েছে কি না। এটি হলে টিকা সম্পর্কে মানুষের মনে ভালো ধারণা জন্মাবে।

গত বছরের ৩ জুন করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি করোনার অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন (দ্রুত সময়ে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা) পরীক্ষা চালুর সুপারিশ করে। একই সুপারিশ করে নমুনা পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালার ওপর মতামত দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। তারা বলেছে, দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি বুঝতে অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা একসঙ্গে শুরু করা জরুরি। এরপর গত বছরের ৫ ডিসেম্বর দেশে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

সরকার গঠিত দুই কমিটির সদস্যরাই বলছেন, তাঁদের সুপারিশ আমলে না নিয়ে সরকার কেন শুধু অ্যান্টিজেন পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে, তা বোধগম্য না। উপসর্গহীন অনেক রোগী আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে সুস্থও হয়ে গেছেন। সমাজে আসলে কত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে কতজনের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তা জানার জন্য দ্রুত অ্যান্টিবডি পরীক্ষা চালু করা প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ফরিদ হোসেন মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত ব্যক্তিপর্যায়ে করোনার অ্যান্টিবডি পরীক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও যদি গবেষণার কাজে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার অনুমতি চায়, তাহলে দেওয়া হবে।

গণস্বাস্থ্যের কিটের কার্যকারিতা প্রমাণিত

বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের আগেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র অ্যান্টিবডি শনাক্তের র‌্যাপিড কিট উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে নমুনা কিট উৎপাদনের কাঁচামাল আনা ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা নিয়ে ঔষধ প্রশাসনের সঙ্গে অনেক দিন টানাপোড়েন চলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের। এরপর গত বছরের জুলাই মাসে ঔষধ প্রশাসন অ্যান্টিবডি কিট নীতিমালা প্রণয়ন করে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ঔষধ প্রশাসনের নীতিমালা অনুযায়ী তাদের উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতা প্রমাণের উদ্যোগ নেয়। নীতিমালার শর্ত মেনে আইসিডিডিআরবিতে কিটের তুলনামূলক কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গত ২৫ আগস্ট ঔষধ প্রশাসনে একটি চিঠি দেয়। তাতে বলা হয়, তৃতীয় পক্ষের মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণস্বাস্থ্যের কিটের কার্যকারিতা অনুমোদনযোগ্যভাবে প্রমাণিত।

২৫ আগস্টের চিঠিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র অ্যান্টিবডি কিটের নিবন্ধন, বিপণন ও তৈরির অনুমোদন দেওয়ার আবেদন জানায়। এরপর ৪, ১৩ ও ২০ সেপ্টেম্বর অ্যান্টিবডি কিটের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে ঔষধ প্রশাসনকে আরও তিনটি চিঠি দেয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

গণস্বাস্থ্য কিট প্রকল্পের সমন্বয়ক মুহিব উল্লাহ খোন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ঔষধ প্রশাসনের নীতিমালা অনুযায়ী অ্যান্টিবডি কিটের সব কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন অনুমোদন না দিয়ে আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার গল্প শোনানো হচ্ছে।

সবশেষ ২০ সেপ্টেম্বর ঔষধ প্রশাসন থেকে গণস্বাস্থ্যকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক নীপা চোধুরীর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনুকূলে জরুরি ব৵বহারের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে দিকনির্দেশনা চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাওয়ার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সরকার গঠিত নমুনা পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা কমিটির প্রধান ছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক লিয়াকত আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে দেশের মানুষকে চার ধরনের টিকা দেওয়া হচ্ছে। কোন টিকায় অ্যান্টিবডি কত দিন থাকছে, সেটা দেখা দরকার। টিকা নেওয়ার পরও কতজন আক্রান্ত হচ্ছে, কতজনের অবস্থা জটিল হচ্ছে, সেগুলোও ক্লিনিক্যালি দেখা দরকার। করোনার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা আরও বিস্তৃত করা দরকার।