'আল্লাহ, আমার মেয়েটারে ফিরিয়ে দাও'
সকালে অভিভাবকের হাত ধরে স্কুলে গিয়েছিল তাসনিম আলম তিশা। মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সে। কথা ছিল, দুপুরে স্কুল ছুটির পর মায়ের সঙ্গে বাসায় ফিরে খাবার খাবে। মা আনতেও গিয়েছিলেন। তবে বাসায় আর পৌঁছাতে পারেনি। এর আগেই রাস্তায় বাসের চাপায় প্রাণ গেল শিশুটির।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ার মাঝামাঝি লাইফ এইড হাসপাতালের সামনে আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া একটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিশার লাশ উদ্ধার করে নেওয়া হয় কাফরুল থানায়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার মো. শামীম হোসেন ও পাশে ওসি তদন্ত আসলাম উদ্দিনের তালাবদ্ধ কক্ষের সামনের করিডরে স্বজনদের জড়িয়ে বিলাপ করছিলেন তিশার মা রিমা আক্তার। চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমার তিশা, তুই কই গেলি? আল্লাহ, তুমি তো সব পার। আমার মেয়েটারে ফিরিয়ে দাও। ওর তো দুপুরে ভাত খাওয়ার কথা ছিল।’

থানার সামনে রাখা অ্যাম্বুলেন্সে বিকেল চারটা পর্যন্ত পড়ে আছে তিশার নিথর দেহ। স্বজনের কোল থেকে মৃত বোনের দিকে ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে ছিল পাঁচ বছর বয়সী ছোট ভাই তাহমিদ আলম।
তিশার বাবার নাম খোরশেদ আলম। তিনি মিরপুর এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মী মোহন সরকারের সামনেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিশাকে ছোটবেলা থেকেই তিনি চেনেন। বেলা একটার দিকে স্কুল ছুটির পর একটি রিকশায় করে পূর্ব কাজীপাড়ার আল হেলাল হাসপাতালের কাছের বাসায় ফিরছিল তিশার মা, তিশা আর ছোট ভাই। রিকশাটি লাইফ এইড হাসপাতালের সামনে থামে। সেখান থেকে সড়ক বিভাজক পার হওয়ার জন্য এগিয়ে যায় তারা। মা ছেলের হাত ধরেছিলেন। মেয়ে পাশেই ছিল। মা ছেলেকে নিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর ওঠে যান। মেয়ে উঠতে পারেনি। মুহূর্তের মধ্যেই একটি দ্রুতগতির বাস মেয়েটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তিশার মৃত্যু হয়।
ট্রাফিক পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়ার দিকে যাওয়ার সময় তেঁতুলিয়া পরিবহনের একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো ব-১১৭৩৭০) চাপায় স্কুলছাত্রী তিশার মৃত্যু হয়। তেঁতুলিয়া পরিবহন আবদুল্লাহ থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত যাত্রী আনা-নেওয়া করে। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি বলেন, তিশা তাঁর বিদ্যালয়ের ছাত্রী। মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দুর্ঘটনার পরপর চালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কাফরুল থানার কোনো কর্মকর্তা কিছু বলছেন না। বাসটি জব্দ করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়তে ক্লিক করুন
রাজধানীতে বাসের চাপায় স্কুলছাত্রী নিহত