'একটা মিঠাই দেবেন?'

শিশু তিশা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়েছিল। যেন সে জাদু দেখছে! আসলেই তো তাই! আংকেলের হাতে তো এমন কিছু সে দেখেনি। তাহলে চাকা ঘুরিয়ে এত বড় জিনিস বানানো গেল কীভাবে? গোলাপি রঙের হাওয়াই মিঠাইয়ে কামড় দিয়ে তিশার বিস্ময় এবার আনন্দে রূপ নিল। ততক্ষণে সে বস্তুটির নাম জেনে গেছে। কচিকণ্ঠে বলল, ‘আংকেল আমিও মিঠাই বানাব। শেখাবেন?’
এই প্রথম হাওয়াই মিঠাই বানাতে দেখেছে তিশা। হাওয়াই মিঠাইওয়ালা ইসমাইল হোসেনও (৪৫) আনন্দ পাচ্ছিলেন তিশার খুশি দেখে। বাঁ হাত চরকায় রাখলেন। চরকার প্লেটে ডান হাতে ধরে রেখেছিলেন বাঁশের কাঠি। বাঁ হাত দিয়ে চরকা ঘুরিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই তিনি বানিয়ে ফেললেন একটি গোলাপি রঙের হাওয়াই মিঠাই। এবারের ক্রেতা তিশার চেয়ে বড় আরেক শিশু।ইসমাইল হোসেন জানালেন, জাতীয় শিশু পার্কের সামনে ২০ বছর ধরে তিনি হাওয়াই মিঠাই বানান। গতকাল ঈদের দিন শিশু পার্কের সামনে একের পর এক হাওয়াই মিঠাই তৈরি করছিলেন। চোখের পলকে তৈরি হয় হাওয়াই মিঠাই। লোহার তৈরি চরকার ওপর রাখা গামলা আকৃতির বড় বাটি। এর মধ্যে রয়েছে লোহার তৈরি আরেকটা ছোট্ট বাটি। ছোট্ট বাটিতে দেওয়া হচ্ছে গোলাপি রঙের চিনি। এরপর বাঁ হাত দিয়ে চরকা ঘোরানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে ডান হাতে থাকা লাঠিতে জড়িয়ে যাচ্ছে মিঠাই। এরপর মিঠাই ঢোকানো হয় পলিথিনের প্যাকেটে। এভাবেই তৈরি হয় গোলাপি রঙের হাওয়াই মিঠাই।
মিঠাইওয়ালা ইসমাইল প্রথম আলোকে বললেন, ‘হাওয়াই মিঠাই বানাই ২০ বছর ধরে। মিঠাই বানাতে আমার খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য মিঠাই তৈরির আনন্দই আলাদা।’
হাওয়াই মিঠাই বানাতে বানাতেই কথা বলছিলেন তিনি। বললেন, হাওয়াই মিঠাই তৈরি হয় চিনি দিয়ে। চিনি আগুন দিয়ে গলানো হয়। চিনির সঙ্গে খাবারের রং মেশানো হয়। ছোট্ট বাটির মধ্যে চিনি দেওয়ার পর চরকা ঘোরালে তা থেকে মাকড়সার জালের মতো সুতা তৈরি হয়। সেই সুতা লাঠিতে জড়ানোর পর লোকে তাকে হাওয়াই মিঠাই বলে। একেকটি মিঠাই বিক্রি করেন ১৫ টাকায়। আগে ১০ টাকায় বিক্রি করতেন। তাঁর ভাষায়, চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়াতে হলো।
হাওয়াই মিঠাই কি দিয়ে কীভাবে তৈরি হয় তা জানা নেই স্কুল পড়ুয়া তন্বীষার। শুধু বলল, ‘খেতে খুব মজা।’
ইসমাইল বললেন, শিশুদের গল্প শুনতে বড়ই ভালো লাগে। এই হাওয়াই মিঠাই বানানোই তাঁর পেশা। এটা ছাড়া অন্য কাজ শেখেননি। এ দিয়েই চলে তাঁর সংসার। স্ত্রী ও সন্তানদের নেত্রকোনায় গ্রামের বাড়িতে রেখেছেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তারা লেখাপড়া করছে। একা ঢাকায় থেকে এভাবে কষ্ট করছেন ছেলেমেয়ের জন্য। হাওয়াই মিঠাই তাঁর স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ছেলে মেয়েকে অনেক বড় করে তোলার স্বপ্ন দেখেন তিনি।