'একটি' নামে ডাকো আমায়

সিলেট নগরের প্রবেশমুখ দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকের এই চত্বরের তিনটি নাম এভাবেই শোভা পাচ্ছে l প্রথম আলো
সিলেট নগরের প্রবেশমুখ দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকের এই চত্বরের তিনটি নাম এভাবেই শোভা পাচ্ছে l প্রথম আলো

গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সড়কের মোড়। এই চত্বরে আকর্ষণীয় একটি স্থাপনা করেছে একটি আবাসন কোম্পানি। তাতে লেখা রয়েছে সেই কোম্পানির নাম ‘রয়েল সিটি’। এর পাশেই রয়েছে আরও দুটি সাইনবোর্ড। একটিতে লেখা ‘পীর হাবিবুর রহমান চত্বর’। অন্যটিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন চত্বর’।
এভাবে এক চত্বরে তিনটি নাম শোভা পাচ্ছে সিলেট নগরের প্রবেশমুখ দক্ষিণ সুরমার পারাইরচক এলাকায়। এক চত্বরের তিন নাম নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছে মানুষ। তাদের প্রশ্ন, তাহলে আসল নাম কোনটি?
পারাইরচকের তিন রাস্তার মোড়টি হচ্ছে সিলেট নগর, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ও সিলেট-তামাবিল সড়কের বাইপাস সড়কের একটি মোড়। এক পাশে রয়েছে আবাসন কোম্পানি ‘রয়েল সিটি’। ২০১০ সালের দিকে রয়েল সিটি কর্তৃপক্ষ এই মোড়ে দর্শনীয় স্থাপনাটি নির্মাণ করে। তাতে ‘রয়েল সিটি’ লেখা থাকায় তিন রাস্তার মোড়টি ওই নামেই পরিচিত পায় তখন। এর আগে পারাইরচকের মোড় নামে ডাকা হতো।
এর তিন বছরের মাথায় সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী তাঁর নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থাপনা মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ভাষাসংগ্রামী ও বরেণ্য রাজনীতিবিদদের নামে নামকরণের উদ্যোগ নেন। এই উদ্যোগের শুরুতেই রয়েল সিটি মোড়ে ‘পীর হাবিবুর রহমান চত্বর’ সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়। সাংসদ নিজে ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর এর উদ্বোধন করেন। এরপর রয়েল সিটি নামের মধ্যেও চত্বরটি পীর হাবিবুর রহমানের নামে পরিচিতি পায়।
রয়েল সিটির স্থাপনা ও পীর হাবিবুর রহমানের সাইনবোর্ডের সঙ্গে সম্প্রতি সেখানে ‘মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন চত্বর’ নামে আরেকটি সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। গত জানুয়ারির শুরুতে সাঁটানো ওই সাইনবোর্ডের নিচে লেখা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১৫। তবে কোন মন্ত্রণালয় তার উল্লেখ নেই। যোগাযোগ করলে রয়েল সিটি কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা চত্বরের কোনো নামকরণ করেননি। তবে একটি দর্শনীয় স্থাপনা নির্মাণ এবং পাশেই রয়েল সিটি আবাসন থাকায় স্থানীয় লোকজন এটিকে রয়েল সিটি চত্বর নামেই ডাকে।
প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ পীর হাবিবুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন আহমদ দুজনই দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা। সিরাজ উদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। তিনি ২০০২ সালের ১৪ জানুয়ারি মারা যান। তাঁর নামে দক্ষিণ সুরমার পাঁচমাইল এলাকায় একটি রাস্তার নামকরণ হয়েছে।
পীর হাবিবুর একাধারে একজন ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাবেক সাংসদ ও গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। ২০০৪-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। তাঁর নামে সিলেট সিটি করপোরেশন পরিচালিত একটি পাঠাগার রয়েছে।
বর্তমানে গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিবিদ আরশ আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জানামতে, পীর হাবিবুর রহমানের পরিবার বা তাঁর রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে আমরা তাঁর নামে কোনো স্থাপনার নামকরণের দাবি জানাইনি। এরপরও তাঁর নামে চত্বর হয়েছে, এটা আমাদের জন্য খুশির ছিল। কিন্তু এক চত্বরে তিনটি নাম শোভা পাওয়াটা বিভ্রান্তিকর তো বটেই, পীর হাবিবুর রহমানের রাজনৈতিক অনুসারী হিসেবে আমাদের জন্য বিব্রতকরও।’
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, স্থানীয় সাংসদ হিসেবে মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কিছু স্থাপনার নামকরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ কারণে এ নিয়ে কেউ কথা বলছেন না। তিনি যেমন চত্বরের নামকরণ নিজে উদ্বোধন করেছেন, আবার পাঁচমাইলে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিনের নামে সড়কেরও উদ্বোধন করেছেন।
এ বিষয়ে সাংসদ মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক ও বরেণ্য রাজনীতিবিদদের নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নামকরণ করেছেন তিনি। এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছেন।
পারাইরচক চত্বরে তিনটি নাম প্রসঙ্গে সাংসদ বলেন, ‘এক জায়গার নাম একটিই হওয়া উচিত। একের বেশি হলে এটা অবশ্যই বিব্রতকর। আমি সাম্প্রতিক অবস্থা দেখিনি। দেখে শিগগির বিষয়টির সমাধান করব।’