'কালা বাবু' ১৩ লাখ
কুচকুচে কালো রং। কিছুক্ষণ পরপর গা মুছে দেওয়ায় তা যেন আরও চকচক করছে। মাঝেমধ্যে গায়ে হাত বুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর মাথার ওপর বিশাল প্যান্ডেলে ঝুলছে কয়েকটি ফ্যান। যত্ন-আত্তির কোনো কমতি নেই। কারণ, দাম হাঁকা হচ্ছে ১৩ লাখ টাকা; নাম ওর ‘কালা বাবু’।
কালা বাবুর মালিক ফারুক হোসেন ১৩ লাখ টাকা দাম হাঁকলেও ক্রেতাদের কথা শুনে মুখ তাঁর মলিন হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কাস্টমাররা দাম কচ্ছে পাঁচ লাখ টাকা। অর্ধেক দামও হচ্ছে না। কিছু কম হলি বেচব। না হলি গরু নিয়ে বাড়ি চইলে যাব।’

রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাটে প্রবেশমুখের পাশেই কালা বাবুর দেখা মিলবে। কালা বাবুর সঙ্গে আরও আটটি গরু বিশাল প্যান্ডেলের নিচে রাখা হয়েছে। ফারুকের দাবি, প্রতিটি গরুই কুষ্টিয়ার পোড়াদহে নিজের খামারের জন্ম ও লালন-পালন করেছেন। আটটির মধ্যে কালা বাবু সবচেয়ে দীর্ঘকায়। লম্বায় ৯ ফুট। ওজন ৩২ মণ।
কালা বাবুর দাম ১৩ লাখ টাকা কেন চাইছেন? ফারুকের জবাব, ‘সাড়ে তিন বছর বয়স কালা বাবুর। ফ্রিজিয়ানা জাতের এই গরুর জন্ম আমার খামারেই। ওরে পালতি খরচ হইয়েছে সাত লাখ টাকার বেশি। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ তো আছেই। এখন দেখি কত দাম ওঠে। হাট তো জমেনি এখনো।’
ফারুকের মতে, কালা বাবু দেখতে গম্ভীর হলেও স্বভাব বেশ শান্ত। অন্য গরুকে কখনো মারেনি। কাউকে আঘাতও করেনি। দুষ্টুমি ভাব একদমই নেই। প্রতিদিন কালা বাবুকে ছোলা, গমের ভুসি, খেসারি, জব, ধানের কুঁড়া খাওয়ানো হয়।
কালা বাবুর কাছ থেকে একটু দূরেই দেখা মিলল ‘সাদা চাঁদের’। ওর গায়ের রংটা কালা বাবুর ঠিক বিপরীত। একেবারে ধবধবে সাদা। কেবল শিং দুটি কালো। তবে কালা বাবুর মতো সাদা চাঁদ এসেছে কুষ্টিয়া থেকে। সাদা চাঁদের দাম অবশ্য কালা বাবুর তুলনায় বেশ কম। এ গরুটির মালিক হেলালউদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে দুটি সাদা চাঁদ আছে। দুই বছর বয়সের গরু দুইটা দেখতি একই রকম। আকারও একই। দুইটার মোট দাম সাড়ে ছয় লাখ টাকা হলি বেইচে দেব।’

গরু আছে, ক্রেতাদের সাড়া নেই
ঈদের মাত্র চার দিন বাকি। গাবতলীর পশুর হাট এখনো জমে ওঠেনি। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে গরু আসছে হাটে। ক্রেতারা খোঁজখবর নিতে হাটে আসছেন।
বিক্রেতারাও ক্রেতাদের মনোভাব যাচাই করছেন। বড় গরুর তুলনায় ছোট গরুর দাম বেশি চাইছেন তাঁরা। দু-তিন হাজার টাকার বেশি ছাড় দিতে নারাজ বিক্রেতারা।
লালমনিরহাটের আনোয়ারুল হক ছোট আকারের দশটি গরু হাটে এনেছেন গত শনিবার। সোমবার দুপুর পর্যন্ত একটিও বিক্রি হয়নি। একটি গরুর দাম চাইছেন দেড় লাখ টাকা। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হলে বিক্রি করবেন। একজন ক্রেতা দাম বলেছেন, ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। তাতেও নারাজি আনোয়ারুল।
মাঝারি আকারের চেয়ে ছোট গরুর দাম যেন আরও বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। কুষ্টিয়ার একজন গরুর ব্যাপারীকে হাটের হাসিলঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। আনুমানিক তিন মণ ওজন মাংস মিলবে জানিয়ে তিনি একটি গরুর দাম হাঁকলেন ৮০ হাজার টাকা। ৬০ হাজার টাকার ওপর দাম না পেলে গরুটি বিক্রি করবেন না বলে জানালেন তিনি।
বিক্রি না থাকায় গাবতলীতে অস্থায়ী হাসিলঘরগুলো এখনো চালু হয়নি। স্থায়ী হাসিলঘরের সদস্য মো. সোলায়মান বলেন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত ১০টি গরু বিক্রি হয়েছে।
হাসিলঘরটির সামনে একসঙ্গে দুটি গরুর দাম পরিশোধ করছিলেন নূরুল আলম চৌধুরী নামের এক ক্রেতা। কুষ্টিয়ার ব্যাপারী নূর মণ্ডলের কাছ থেকে মাঝারি আকারে ষাঁড় দুটি কিনেছেন ২ লাখ ৬ হাজার টাকায়। দাম মেটানোর সময় নূরুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘দাম বেশি পড়েছে।’ তাঁর কথার পাল্টা জবাবে দিয়ে বিক্রেতা নূর মণ্ডল বলেন, ‘আমি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা চাইছি। যে দামে বিক্রি করছি, তাতে লস হইল আমার। কী করমু কিছু করার নাই।’
গাবতলী পশুর হাটের ইজারাদার কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, গাবতলীর হাটে এখন আনুমানিক ৩০ হাজার কোরবানির গরু আছে। বেশির ভাগই দেশি জাতের গরু। ইন্ডিয়ান গরুও আছে। আরও অনেক গরু আসবে। বুধবার বিকেলের আগে হাট সেভাবে জমবে না।