'জীবনের জন্য গান গাই'

বাউল শিল্পীরা গানের আসর বসিয়েছেন কেশবপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের এক সেলুনে। গত রোববার তোলা ছবি l প্রথম আলো
বাউল শিল্পীরা গানের আসর বসিয়েছেন কেশবপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের এক সেলুনে। গত রোববার তোলা ছবি l প্রথম আলো

‘না দেখিলে প্রাণে মরি, অন্তর যায় জ্বলিয়া/ তোরে না দেখিলে, শ্যাম কালিয়া অথবা বটবৃক্ষের তলায় যেমন অন্য বৃক্ষ জন্মায় না/ ধনীর সঙ্গে গরিব লোকের পিরিত সাজে না।’ যশোরের কেশবপুরের কোনো না কোনো জায়গায় প্রতিদিন এ ধরনের বাউল গানের আসর বসে। দিনমজুর ও খেটেখাওয়া মানুষ এসব গানের শিল্পী।
সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে শ্রমজীবী মানুষগুলো বসে যান গানের আড্ডায়। কখনো পুরোনো বাসস্ট্যান্ডের সেলুনে, কখনো মাছ বাজারের চায়ের দোকানে, বালিয়াডাঙ্গার কোনো দোকানে, আবার কখনো হাসপাতালের ওষুধের দোকানের সামনে জমে ওঠে সন্ধ্যাকালীন বাউল আসর। আর এই আসরের শ্রোতা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
নছিমনচালক মিজানুর রহমান বলেন, তিনি জীবনে কয়েক দিন মাত্র বিদ্যালয়ে গিয়েছেন। তাঁর কোনো গুরু নেই। গান শুনে মুখস্থ করে গান করেন। তাঁর সঙ্গী আশুতোষ রায়, আবু তালেব, আবদুর রাজ্জাকসহ আটজন গানপাগল মানুষ।
আবু তালেব বলেন, ‘সারা দিন ইটের ভাটায় কাজ করি আর গান গাই। প্রতিদিন আসর বসাই।’ মিজানুর রহমান বলেন, ১০-১২ বছর ধরে এভাবেই তাঁদের গানের আসর চলছে। বিভিন্ন আসরে তাঁদের ডাক পড়ে। সেখান থেকে টাকা পান। আর দিনমজুরি করে পেট চালান।
তাঁরা দেহতত্ত্ব, লালন, পীর মোজাহিদ, বৈষ্ণব পদাবলি, রাধারমণ, হাসন রাজা, বিজয় সরকার, ভান্ডারি ও মাজারের গান করেন। তাঁদের বাদ্যযন্ত্র একতারা, দোতারা, ঢোল, চাকি, আড়বাঁশি, জিপসি আর দুটি ছোট কাঠের টুকরা। এ সময় কয়েকজন বলেন, পীরের দরগা, মাজার থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় তাঁদের গানের জন্য ডাকা হয়। কখনো কখনো পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত গানের আসরেও চলে যান। তাঁরা বলেন, তাঁরা গান করেন জীবনের জন্য, মনের জন্য। এলাকায় আসর বসাতে তাঁদের কোনো চাহিদা নেই। কেউ ভালোবেসে যা দেন তাতেই তাঁরা খুশি থাকেন।
গত রোববারের বাউল আসরের শ্রোতা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কেশবপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, ‘এই বাউলদের আমাদের ধরে রাখতে হবে। কারণ তাঁরা মাটির গান করেন।’ স্থানীয় শিক্ষক স্বপন মণ্ডল বলেন, তাঁদের গান সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে।
ইউএনও শরীফ রায়হান কবির বলেন, এই বাউলদের আসর বসানো ভালো উদ্যোগ। তাঁরা গানের মাধ্যমে মানুষের কথা বলেন। গ্রামীণ সংস্কৃতি তুলে ধরেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।