কারও হাতে পোস্টার। কেউ দাঁড়িয়েছে প্ল্যাকার্ড হাতে। এসব পোস্টার-প্ল্যাকার্ডের ভাষায় শুধুই আহ্বান, অনুরোধ, দাবি, আকুতি...
কোনো পোস্টারে লেখা ‘আমরা পেট্রলে দগ্ধ হতে চাই না’, কোনোটায় লেখা ‘নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে চাই’, কেউ আকুতি জানাচ্ছেন ‘আমরা নিরাপদে স্কুলে যেতে চাই’। নিরাপদে লেখাপড়া ও সঠিক সময়ে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে চট্টগ্রামের নয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কে গতকাল রোববার মানববন্ধন করেছে। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে যোগ দেন অভিভাবক, শিক্ষকেরাও।
সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়, বাকলিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও সিটি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের সড়কে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। শিক্ষকেরা জানান, গতকাল বিদ্যালয় ছুটি থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে এ মানববন্ধন করেছে।
মানববন্ধনে যোগ দেওয়া শিক্ষকেরা বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে লেখাপড়া করতে পারে, সে জন্য সব মহলকে উদ্যোগ নিতে হবে।
নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বেগম মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে বিদ্যালয়ে আসতে পারে এবং পরীক্ষা দিতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য সবাই মিলে মানববন্ধন করেছি। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে তাদের শিক্ষাজীবন যাতে ধ্বংস না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের খেয়াল রাখা দরকার।’
কথা হয় একই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সামিউল হাসনাত ও ইমরানুল হকের সঙ্গে। তারা বলে, বন্ধুদের অনেকে এখন নিয়মিত স্কুলে আসে না। প্রায় সময় শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা থাকে। আমরা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই।’
অস্থিরতার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হাসমত জাহান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায়। ছোটবেলা থেকে এ ধরনের অস্থির পরিবেশ দেখে তারা শঙ্কিত ও হতাশ।’
নাসিরাবাদ বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবক মো. মোজাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। তারা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে পারে এবং নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতে পারে, এটুকুই চাওয়া।
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব মহলের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, তারা যেন শিক্ষাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখে। বছরের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস চলে গেছে। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে এসেছে ৪০-৫০ শতাংশে।’
দুই পরীক্ষার্থী প্রসেনজিৎ বড়ুয়া ও মুনতাসীর মাহমুদ গতকাল সকালে বলেন, ‘পরীক্ষার আগমুহূর্তে এই অনিশ্চয়তা ভালো লাগে না। আমরা সময়মতো পরীক্ষা দিতে চাই।’
এ বিষয়ে মুঠোফোনে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পর একেবারে শেষ মুহূর্তে তা পিছিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের মনঃসংযোগ নষ্ট হয়।