'নিহতের তালিকা' অধিকারকে দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম

হেফাজতের ‘ঢাকা অবরোধ’
হেফাজতের ‘ঢাকা অবরোধ’

রাজধানীর শাপলা চত্বরে গত ৫ মে মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ‘অসংখ্য ব্যক্তি নিহত’ হওয়ার দাবি করে আসছে হেফাজতে ইসলাম। তবে এখন পর্যন্ত ‘নিহত বা নিখোঁজ’ কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি সংগঠনটি।গতকাল শুক্রবার বিকেলে যোগাযোগ করলে হেফাজতে ইসলামের নেতারা প্রথম আলোকে জানান, ‘নিহতদের’ একটি তালিকা প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। তবে তাঁদের তৈরি করা তালিকার একটি খসড়া বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির দুজন নেতা।মতিঝিলের ওই অভিযানের বিষয়ে অধিকার গত ১০ জুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে দাবি করা হয়, চলমান অনুসন্ধানের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অধিকার নিহত ৬১ জনের নাম সংগ্রহ করেছে।জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাঈনদ্দীন রুহি অধিকারকে তাঁদের খসড়া তালিকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধিকার একটি নিরপেক্ষ মানবাধিকার সংস্থা। তারা আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে, আমরা সহযোগিতা করেছি। তবে, তারা তাদের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য প্রকাশ করেছে।’অধিকার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করার এক মাস পর গত ১০ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয় ওই তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন এবং ৬১ জনের নাম-ঠিকানা চেয়ে অধিকারকে চিঠি দেয়। কিন্তু অধিকার নিহতের কোনো তালিকা সরকারকে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা দাবি করে, সরকার হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করলে ওই কমিশনের কাছে তারা তালিকা হস্তান্তর করবে।তথ্য মন্ত্রণালয় ওই চিঠি দেওয়ার এক মাস পরে ১০ আগস্ট রাতে অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে শাপলা চত্বরের অভিযানে ৬১ জন নিহত হওয়ার কাল্পনিক দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়। এর মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করা এবং মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানারও অভিযোগ তোলা হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে মামলা করে সরকার।হেফাজতে ইসলামের ঢাকা ও চট্টগ্রামের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকারের সম্পাদককে গ্রেপ্তারের পর তালিকা প্রকাশ করা নিয়ে হেফাজতের নেতাদের মধ্যে এখন কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। এক পক্ষ মনে করছে, আদিলুর রহমানকে নির্ভার করার জন্য হলেও শিগগিরই তাদের তালিকা প্রকাশ করা উচিত। সংগঠনের আরেক পক্ষ মনে করে, এখনো তালিকা প্রকাশের উপযুক্ত সময় হয়নি। হেফাজতের দুজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, ৫ মের ঘটনায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথকভাবে দুটি কমিটিকে নিহত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখন তালিকা দুটি মেলানোর কাজ চলছে বলে জানান ঢাকার দায়িত্বে থাকা মিরপুরের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ও হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর নেতা ফজলুল করিম। তবে, দুই তালিকায় পাওয়া নিহত বা নিখোঁজের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনই জানাতে রাজি হননি তিনি।

গত ৪ জুন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছিলেন, তাঁরা ৭৩ জন নিহত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। কিন্তু গতকাল এক নেতা এই সংখ্যা শতাধিক বলে দাবি করেন।

এর আগে ৭ মে এক বিবৃতিতে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী দাবি করেছিলেন, অভিযানে আড়াই থেকে তিন হাজার লোক মারা গেছেন। পরদিন ৮ মে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) বেনজীর আহমেদ হেফাজতের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এত লোক মারা গেলে তাঁদের স্বজনেরা কোথায়? তাঁরা তো কেউ কোথাও লাশ দাবি করতে বা নিখোঁজদের খবর নিতে আসছেন না।

এ ঘটনায় বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীও কয়েক হাজার লোক নিহত হওয়ার দাবি করেছিল। কিন্তু প্রায় সাড়ে তিন মাস হতে চলেছে, হেফাজতে ইসলাম নিহত কোনো ব্যক্তির নাম-পরিচয় প্রকাশ করছে না। এখন তারা দাবি করছে, অভিযানে ‘অসংখ্য লোক নিহত’ হয়েছেন। ফলে তাদের এই দাবির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর নেতা ফজলুল করিম বলেন, ‘আমরা অবাস্তব কোনো তথ্য প্রকাশ করব না। সে জন্য একটু সময় লাগছে।