'বেচার লোক আছে কেনার লোক নাই'

পাবনার বেড়া উপজেলার পায়না গ্রামের জহুরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে দাপটের সঙ্গে মহাসড়কে নছিমন চালিয়ে আসছিলেন। মাস খানেক ধরে পুলিশের বাধায় মহাসড়কে তেমনভাবে আর নছিমন চালাতে পারছেন না। ভবিষ্যতে মহাসড়কে যানটি আর না-ও চালানো যেতে পারে—এ আশঙ্কায় নছিমনটি বিক্রির চেষ্টা করছেন। কিন্তু অর্ধেক দামেও কেউ বলছেন না৷
জহুরুল বলেন, ‘দেড় লাখ টাকায় কেনা নছিমনের দাম এখন ৭০ হাজার টাকা কয়। মহাসড়কে নছিমনের চলাচল চিরতরে বন্ধ হয়া গেলি তিন মাস পর ভাঙারি হিসেবেও ইডাক আর বেচা যাবি না। তাই সিদ্ধান্ত নিছি যা দাম হয় বেইচ্যা দেব।’
জহুরুলের মতো পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলার অনেকেই তাঁদের নছিমন-করিমন বিক্রির চেষ্টা করছেন। কিন্তু অর্ধেক দামও না ওঠায় অনেকেই যানটি বিক্রি করছেন না।
এদিকে সুযোগ বুঝে কেউ কেউ স্বল্প দামে অবৈধ নছিমন-করিমন কিনে রাখছেন। তাঁদের ধারণা, কিছুদিনের মধ্যেই মহাসড়কে আগের মতো নছিমন-করিমন যান চালানো যাবে৷
একাধিক পরিবহন সংগঠন সূত্রের হিসাব অনুযায়ী, বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলায় ১০ হাজারেরও বেশি নছিমন-করিমন রয়েছে। অবৈধ এ যান দুটির কারণে সড়ক-মহাসড়কে গত কয়েক বছরে ঘটেছে বহু দুর্ঘটনা। এতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্য পরিবহনের চেয়ে নছিমন-করিমনের দাম কম কিন্তু আয় বেশি হওয়ায় এগুলো তৈরির হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। হাতে টাকাপয়সা আছে—এমন অনেকেই একের পর এক নছিমন-করিমন তৈরি করে চালকের সঙ্গে দৈনিক ভাড়া চুক্তিতে মহাসড়কে নামাচ্ছিলেন। আবার রিকশাচালক থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের অনেকেই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে নছিমন-করিমন কিনে রাতারাতি চালক সেজে সড়ক-মহাসড়কে নেমেছেন। মহাসড়কে নছিমন-করিমন বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে ঋণ নিয়ে যাঁরা যানবাহনটি কিনেছেন, তাঁরাই পড়েছেন বেশি বিপাকে। মূলত, এঁরাই নছিমন-করিমন বিক্রির জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।
আহমদপুর-বিরামপুর নছিমন-করিমন কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবাদ আলী বলেন, ‘আমার আওতাভুক্ত এলাকায় চার শতাধিক নছিমন-করিমন চলে। এগুলোর বেশির ভাগই ঋণ নিয়ে কেনা। এখন সেই ঋণের কিস্তি শোধের চাপে অনেকেই তাঁদের গাড়ি বেচার চেষ্টা করতেছেন। কিন্তু বেচার লোক আছে, কেনার লোক নাই। এরই মধ্যে দু-একটি বিক্রি হচ্ছে একরকম পানির দরে। গত কয়েক দিনে আমার সমিতির আওতাভুক্ত ৪০ থেকে ৫০টি নছিমন-করিমন এ রকম দরে বিক্রি হইছে।’
এদিকে মহাসড়কে নছিমন-করিমন চালানোর দাবিতে একের পর এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে যাচ্ছেন নছিমন-করিমন মালিক ও চালকেরা। নছিমন-করিমন কল্যাণ সমিতির একাধিক নেতা জানান, মহাসড়কে নছিমন-করিমন চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে শিগগিরই তাঁরা উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন। এর পাশাপাশি আন্দোলনও চালিয়ে যাবেন।
বেড়া-সাঁথিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘মহাসড়কে নছিমন-করিমন চলতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কঠোর।’