'মিরাজকে নিয়ে আমরা গর্বিত'

‘মিরাজ আমাদের হিরো। তিনি সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার পাওয়ায় তাঁর সহমর্মিতার কথা, সাহসের কথা বাংলাদেশ ছাপিয়ে বিশ্ববাসী জেনেছে। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের ও গৌরবের। মিরাজকে নিয়ে আমরা গর্বিত।’
মাদারীপুরের যুবক মো. মিরাজ সরদার সম্পর্কে কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুর সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামাল হোসাইন।
গত ১ জুলাই ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়ানক হামলার ঘটনায় নিহত হন বাংলাদেশের নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারাজ আইয়াজ হোসেন। তাঁর স্মরণে পেপসিকো গ্লোবাল ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। মিরাজ সরদার এ বছর পুরস্কারটি পেয়েছেন। গত বুধবার ঢাকার হোটেল র্যাডিসনে মিরাজের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন পেপসিকো গ্লোবালের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইন্দ্রা কে নুয়ি ও ফারাজের মা সিমিন হোসেন।
ঢাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার মাদারীপুরে ফেরেন মিরাজ সরদার। দুপুর ১২টার দিকে মাদারীপুর সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজ গেটে পৌঁছালে মিরাজকে অভিনন্দন জানান কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মিরাজ ওই কলেজটির অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত। পরে তিনি অধ্যক্ষের কক্ষে যান। সেখানে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ হিতেন চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলা, মিরাজের হাতে জঙ্গি আটক—পুরো ঘটনাটি নিয়ে আমরা আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। ফারাজ ও মিরাজের সাহসিকতা, সহমর্মিতা ও বন্ধুর জন্য ত্যাগ স্বীকারের গল্প তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই সমাজে ফারাজ ও মিরাজদের মতো আরও সাহসী তরুণ সৃষ্টি হবে।’
মিরাজকে অভিনন্দন জানাতে কলেজ মাঠে ছুটে আসেন তাঁর পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা। মিরাজের বাবা দুলাল সরদার বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অর্থাভাবে ছেলেকে পড়ালেখা করাতে পারিনি। ছেলেটা সব সময় মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে সাহসী কাজের এত বড় স্বীকৃতি পাবে, তা ভাবতে পারিনি। আমার মিরাজের নাম, মাদারীপুরের নাম পৃথিবীর মানুষ জেনেছে, এটা ভাবতেই গর্বে বুকটা ভরে গেছে।’ গত ১৫ জুন মাদারীপুর সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। মিরাজ সরদার ধাওয়া করে এক জঙ্গিকে আটক করে পুলিশে দেন। পরে রিপন চক্রবর্তীকে তিনি হাসপাতালেও নিয়ে যান।