'হাসিনার দালালি করে লাভ হবে না'

পুলিশি বাধায় গুলশানের বাসভবন থেকে গতকাল বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া। পরে বাসভবনের ভেতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ছবি: প্রথম আলো
পুলিশি বাধায় গুলশানের বাসভবন থেকে গতকাল বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া। পরে বাসভবনের ভেতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ছবি: প্রথম আলো

‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার মুখে বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ধমক দেন। বাড়ি গোপালগঞ্জ কি না জানতে চান। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে, গোপালগঞ্জ আর থাকবে না।
বিএনপির চেয়ারপারসন পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ‘হাসিনার দালালি করে লাভ হবে না। দেশের মানুষের সঙ্গে থাকুন।’
গতকাল রোববার বেলা তিনটার দিকে বাসা থেকে নিচে নেমে গাড়িতে ওঠেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গাড়িটি বাড়ির ফটক পর্যন্ত আসার পর পুলিশ আটকে দেয়। তিনি প্রায় আধা ঘণ্টা গাড়ির ভেতরেই বসে ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা পথ ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও পুলিশ তা শোনেনি। একপর্যায়ে খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে বের হয়ে হেঁটে এগোতে চান। তাঁর হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। কিন্তু পুলিশ এগোতে দেয়নি।
এ সময় খালেদা জিয়া পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। এটা তো ঠিক নয়, আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেবেন না। আপনাদের অফিসার কোথায়, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘সাহস থাকলে সরকার কাউন্টার কর্মসূচি দিয়ে দেখাতে পারত। কিন্তু তা না করে তারা ডিসি-এসপিদের দিয়ে ভাড়া লোক এনে আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।’ খালেদা জিয়া গণমাধ্যমকর্মীদের সামনেই এসব কথা বলছিলেন।
এ সময় উপস্থিত পুলিশের কিছু নারী সদস্য নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘এই যে মহিলা, মুখটা এখন বন্ধ কেন? এতক্ষণ কী বলছিলেন? মুখ বন্ধ কেন এখন? দেশ কোথায়, গোপালী? গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে। গোপালগঞ্জ আর থাকবে না। আপনারা যা করছেন, আপনাদের ওপর আল্লাহর গজব পড়বে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘কত আলেম, এতিম, বিডিআর হত্যা করেছেন, ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছেন। সেদিন কোথায় ছিলেন হাসিনা? কেন সে ফোর্স পাঠায়নি? সে নিজেই জড়িত ছিল এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে, সে জন্য ফোর্স পাঠায়নি।’
বিএনপির চেয়ারপারসন পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ‘হাসিনার দালালি করে লাভ হবে না। দেশের মানুষের সঙ্গে থাকুন। জনগণের সঙ্গে থাকেন। তবেই কাজে দেবে। দেশ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে। আজকে সবার দায়িত্ব হয়ে গেছে দেশ বাঁচানো, মানুষ বাঁচানো। আর আপনারা এখন ঘরে ঘরে ঢুকে মানুষ হত্যা করছেন। মনে করেন এগুলোর হিসাব নাই? এই মা-বোনের কান্না, ...বিডিআর অফিসারদের ওয়াইফদের কান্না, এগুলো কি বৃথা যাবে? এগুলো কোনো দিন বৃথা যাবে না। আজকে যাঁরা এই জুলুম-নির্যাতন করছেন, তাঁদেরকে একদিন এঁদের মতো চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে হবে।’
এ সময় খালেদা জিয়ার সামনে থাকা সাংবাদিকদের জটলার পেছন থেকে পুলিশ সদস্যরা হালকা ধাক্কা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘ধাক্কাধাক্কি বন্ধ করেন। ধাক্কাধাক্কি করবেন না। আমরা কেউ ধাক্কাধাক্কি করতে আসিনি। আমাদের গায়ের ওপর উঠে পড়বেন না। দূরে থাকেন। আপনাদের তো রাস্তায় থাকার কথা, বাড়িতে এসে গেছেন কেন?’
তখন কাছাকাছি থাকা পুলিশের কিছু নারী সদস্য কথা বলাবলি করছিলেন। তাঁদের ধমক দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনাদের মেয়েরা এ রকম ঝগড়া করে কেন? এই মেয়েরা! চুপ করো। কয় দিনের চাকরি হয়েছে, এত কথা বলো? কিসের জন্য এত কথা বলো। চুপ থাকো। বেয়াদব কোথাকার।’
খালেদা জিয়া সামনে থাকা একজন পুলিশ সদস্যকে বলেন, ‘আপনার অফিসার কোথায় গেল, সে তো আসল না। তাঁকে বলবেন আমার সঙ্গে কথা বলতে। বুঝছেন? বাংলায় বলছি, বোঝেননি? নাকি অন্য ভাষায় বলতে হবে?’ এরপর তিনি ফটক থেকে ভেতরে ঢোকেন এবং কিছুক্ষণ আঙিনায় চেয়ারে বসে থাকেন। সর্বশেষ বাসায় ঢোকার আগে আজ সোমবারও একই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে সাংবাদিকদের জানান।
বিকল্প পথে প্রবেশ সাংবাদিকদের: গত শনিবার রাত থেকেই খালেদা জিয়ার বাসভবনের ফটকের কাছাকাছি সাংবাদিকদের ঘেঁষতে দেয়নি পুলিশ। গতকাল সকাল থেকেও ছিল একই অবস্থা। বিকেলে খালেদা জিয়া যখন বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন, তখনো সাংবাদিকদের সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি। বেলা সাড়ে তিনটার পর কয়েকজন সাংবাদিক খালেদা জিয়ার বাড়ির পূর্ব পাশে লাগোয়া একটি বাড়ির সীমানাপ্রাচীরে উঠে ছবি তোলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার বাড়ির ভেতর থেকে সীমানাপ্রাচীরে একটি মই দেওয়া হয়। প্রাচীরের ওপর কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে ওই মই বেয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক খালেদা জিয়ার বাড়ির ভেতরে যান। পুলিশ তাঁদের বাধা দেওয়া চেষ্টা করে। একপর্যায়ে মইটি ভেঙে যায়। এরপর কিছু সাংবাদিক সীমানাপ্রাচীর থেকে একটি নারিকেলগাছ বেয়ে খালেদা জিয়ার বাড়িতে ঢোকেন।