আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল-সমাবেশ না করার আদেশ মেনে চলতে বললেন প্রধান বিচারপতি

সুপ্রিম কোর্ট
ফাইল ছবি

আদালত প্রাঙ্গণে সমাবেশ, মিছিল, র‍্যালি, মানববন্ধন ও ধর্মঘট না করতে হাইকোর্টের ২০০৫ সালের ২৩ মে দেওয়া আদেশ সবাইকে মেনে চলতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতি সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে আদালত অবমাননার অভিযোগে বিএনপিপন্থী সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে করা আবেদন-বিষয়ক এক শুনানিতে আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগে আজ আবেদনটি কার্যতালিকায় ওঠে। আপিল বিভাগ আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন।

এ সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘সেদিন আমরা চারজন বিচারপতি ছিলাম, আজকে চারজন নেই। এটি (আবেদন শুনানি) মুলতবি করছি। সেদিন যে আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তা এখনো কার্যকর আছে ও চলমান থাকবে। আপনারা সবাই এটি মেনে চলবেন। আমরা এখনো নোটিশ (আদালত অবমাননার জন্য) ইস্যু করেনি। এ বিষয়ে ১৫ নভেম্বর সিদ্ধান্ত নেব। এই সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হলো।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা গত আগস্টে বিএনপিপন্থী সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনটি করেন। গত ৩০ আগস্ট আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য উঠেছিল। সেদিন আপিল বিভাগ আদালত প্রাঙ্গণে সমাবেশ, মিছিল, র‍্যালি, মানববন্ধন ও ধর্মঘট না করতে হাইকোর্টের ২০০৫ সালের ২৩ মে দেওয়া আদেশ কঠোরভাবে মেনে চলতে সবাইকে নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে আদালত অবমাননার আবেদনটি শুনানির জন্য ১৯ অক্টোবর (আজ) তারিখ ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগের আজকের কার্যতালিকায় আবেদনটি শুনানির জন্য ১৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

ক্রম অনুসারে আবেদনটি উঠলে অবমাননার আবেদনকারীর আইনজীবী নাহিদ সুলতানা বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা হয়। এরপর ২৭ আগস্ট সমিতিতে একটি সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ প্রচার করে বিচারপতিদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার এই আবেদন। এর পর থেকে তাঁরা (বিএনপিপন্থীরা) গেটের বাইরে সভা সমাবেশ করেন। তাঁরাও আইনজীবী। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছেন, তাঁরা এই অঙ্গনে একসঙ্গে প্র্যাকটিস (আইন পেশা চর্চা) করেন। এই অঙ্গনের ধারাবাহিতা ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখতে আদালত অবমাননার আবেদনটি আনা হয়েছে।

পরে আদালত শুনানি মুলতবি করে আদেশ দেন। আইনজীবী নাজমুল হুদার করা আবেদনে যাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হতে বিএনপিপন্থী ও সমমনা ১৯৫ জন আইনজীবী গতকাল বুধবার আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করেন।

গতকাল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় বিষয়টি ১২৩ নম্বর ক্রমিকে ছিল। তবে গতকাল এর আগের ক্রমিকে থাকা মামলার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আদালতের কর্মঘণ্টা শেষ হয়।

পক্ষভুক্ত হতে চাওয়া ১৯৫ আইনজীবীর মধ্যে সৈয়দ মামুন মাহবুব রয়েছেন। সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে করা অবমাননার আবেদনটি শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের সময় আজ আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব কিছু বলার জন্য ডায়াসে গিয়ে দাঁড়ান। তখন তাঁকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘আপনারা আসবেন পার্টি হিসেবে অ্যাড (পক্ষভুক্ত) হওয়ার থাকলে। নোটিশ (আদালত অবমাননার জন্য) ইস্যু হয়নি। আপনারা কোথায় অ্যাড হবেন, হাওয়াতে? নোটিশ ইস্যু হোক, তারপরে কথা বলেন।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে গত ২৭ আগস্ট একটি সংবাদ সম্মেলন হয়।

এতে দেওয়া বক্তব্যের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে গত ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজমুল হুদা আদালত অবমাননার আবেদনটি করেন। এতে বিচারপতিদের নিয়ে ব্যানার-লিফলেটসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিছিল, অবস্থানের ছবি যুক্ত করা হয়।

যে সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আবেদনটি করা হয়, তাঁরা হলেন কায়সার কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী, ফাহিমা নাসরিন, মো. আবদুল জব্বার ভূঁইয়া, মো. রুহুল কুদ্দুস, মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও গাজী কামরুল ইসলাম।