দুদক চেয়ারম্যান বললেন, শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি কমানো সম্ভব নয়

‘দুর্নীতি দমনে নাগরিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা। ঢাকা, ২৫ মেছবি: প্রথম আলো

নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টি না হলে শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতি রেখে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়, উন্নয়ন হলেও তা টেকসই হবে না। দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’

‘দুর্নীতি দমনে নাগরিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আজ শনিবার ওই সেমিনারের আয়োজন করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।

দুর্নীতি দমনে নাগরিকদের ভূমিকা নিয়ে বলতে গিয়ে পারিবারিক পর্যায়ে পরিবারের কর্তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করতে বোধ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘সন্তান তাঁর বাবাকে জিজ্ঞাসা করবে যে তুমি ৪০-৪৫ হাজার টাকা বেতন পাও, আমার ইংরেজি স্কুলের টিউশন ফি কীভাবে দাও? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি কীভাবে দাও? স্ত্রী তাঁর স্বামীকে বলবে, তুমি তো এত টাকা বেতন পাও, এই ফ্ল্যাটে কীভাবে রাখছ বা ওই দুটি ফ্ল্যাটের মালিক আমরা কীভাবে হলাম?’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ আছে ২৯টি, যার মধ্যে মাত্র একটি অপরাধ আইন অনুসারে দুদক দেখতে পারে। যেখানে স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) বেশি, সাধারণ লোকজন যেখানে যায়, সেসব দুর্নীতির তথ্য আমরা পাই। সেগুলো পত্রপত্রিকায় ও বিভিন্ন জায়গায় আসে। অনেক বিভাগ আছে, যেখানে দুর্নীতি যেভাবে হয়, সংবাদ আসে না, আমরাও কোনো অভিযোগ পাই না।’

দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে পারছি না, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার জন্য।…তবে এটা ঠিক, আমি তিন বছর দুই মাস (দায়িত্বে) আছি। আমি এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক প্রভাব পড়েনি এবং কোনো বেসরকারি লোক, তেমন কোনো চাপ বা সুপারিশ বা হুমকি দেয়নি।’

দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্কুলজীবন থেকেই শিশুদের সামাজিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ।

দুদকের পেটি (ছোটখাটো) বিষয়ে নাক গলানো উচিত নয় বলে মন্তব্য করে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, দুদক বড় একটি প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রপতি ও সংসদীয় কমিটির কাছে রিপোর্ট দেয়। দুদকের বড় বড় পর্যায়ে কাজ করা উচিত। চেয়ারম্যানের চাল চুরি, কারও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব দুদকে অভিযোগ করে দিল, দুদক যদি বুঝতে পারে এটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, প্রথমেই খারিজ করে দেওয়া উচিত। দুদককে অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত, যেন দুদককে কেউ নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এইচআরপিবির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সেমিনারে তিনি দুর্নীতি দমনে দুদককে আরও গতিশীল ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে ১৯টি সুপারিশ তুলে ধরেন।

অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ও এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন বক্তব্য দেন। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরপিবির সহসভাপতি একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া ও সম্পাদক মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী।