মন্ত্রীর সমালোচনা করা নদী কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুরকে সরিয়ে দেওয়া হলো

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী
ফাইল ছবি

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। আজ বুধবার তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ জনস্বার্থে বাতিল করা হলো।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মনজুর আহমেদকে তিন বছরের জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০১৩’–এর ধারা ৫(২) এবং একই আইনের ধারা ৫(৩) অনুযায়ী তিনি এ নিয়োগ পান। যোগদানের তারিখ থেকে এ নিয়োগ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

মনজুর আহমেদ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে যোগ দেন ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় বছর আগে তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করল সরকার।

মনজুর আহমেদ চৌধুরী দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে নদী দখল নিয়ে বক্তব্যের কারণে বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছিলেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরি নাম না উল্লেখ করে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সমালোচনা করেন। ওই দিন তিনি বলেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে যাঁরা বালু উত্তোলন করছেন, তাঁদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে। সেদিন তিনি বলেছিলেন, হায়েনারা দল বেঁধে মেঘনায় হামলে পড়েছে। মেঘনা থেকে আবার বালু তোলার চেষ্টা চলছে। এখানে শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হবে। এতে নদীর ক্ষতি হবে, মাছের ক্ষতি হবে, পরিবেশের ক্ষতি হবে। এদের থেকে নদীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না।

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মনজুর আহমেদ চৌধুরী আজ প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। সরকার নিয়োগ দিয়েছে, আবার সরকারই বাতিল করেছে। তিনি বলেন, নদী রক্ষায় কতটা সততার সঙ্গে কাজ করেছি, তার বিচার জনগণ করবে।

বিভিন্ন সময়ে সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমালোচনা করার কারণেই কি চুক্তি বাতিল হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এই বদলির মাধ্যমে নদী দখলকারী, নদী দূষণকারী, বালুখেকো–তাঁদের বিজয় হয়েছে।

মনজুর আহমেদ চৌধুরী বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, এখন থেকে নিয়মিত সিজিএসে সময় দেবেন।

২০২২ সালে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে মোবাইল কোর্টের (ভ্রাম্যমাণ আদালত) মাধ্যমে বিচার করে কারাগারে পাঠানোর কথা বলেছিলেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেছিলেন, প্রতিদিন ঢাকা শহরের মানুষ ৫০ লাখ কেজি মল ও ১৫০ কোটি লিটার মূত্র উৎপাদন করে। ঢাকা ওয়াসার দায়িত্ব ছিল এগুলো শোধন করা, কিন্তু এগুলো সিটি করপোরেশনের পানিনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে নদ-নদীতে গিয়ে পড়ে। পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ওয়াসার এই ব্যর্থতার কারণে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চান বলে উল্লেখ করেছিলেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

আরও পড়ুন

আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় খাল পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, খালের ময়লা-আবর্জনা যাতে নদীতে গিয়ে না পড়ে সে জন্য খালের মুখে নেট দিতে বলা হয়েছিল। উত্তর সিটি করপোরেশন এখনো সে কাজ করেনি। এ জন্য করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধেও তিনি একই ধরনের শাস্তির কথা বলেন।

মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘ওয়াসার এমডি, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে মোবাইল কোর্টের সম্মুখীন করব আমরা, চাইব যেন তাঁদের ছয় মাসের জেল, চার লাখ টাকা জরিমানা হয়।’

এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমালোচনা করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ।

আরও পড়ুন