ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ১১ মাস বয়সী রোহিঙ্গা শিশুটি এখন আইসিইউতে
রোহিঙ্গা শিশুটির বয়স ১১ মাস। নাম রোশনা বিবি। সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে তাকে ভর্তি করা হয়।
ভর্তির পরপরই রোশনাকে হাসপাতালের শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পাঠানো হয়। কারণ, সে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত। তার অবস্থা এখন সংকটাপন্ন।
শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ধীমান চৌধুরী আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের কারণে শিশুটির (রোশনা) মস্তিষ্কে সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিশুটির অবস্থা খুবই খারাপ। এখান থেকে তার ফিরে আসাটা কঠিন।
চিকিৎসকেরা জানান, ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা হয়। কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। ত্বক শীতল হয়ে যেতে পারে। ত্বকের ভেতরের অংশে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ কারণে ত্বকের ওপর লাল ছোপ সৃষ্টি হতে পারে। বমি, মল বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। প্রচণ্ড পেটব্যথা ও অনবরত বমি হতে পারে। নাক ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। কখনো মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের আইসিইউর বাইরে বসে ছিলেন রোশনার মা জুলেখা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। পাঁচ দিন আগে তাঁর মেয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরে কক্সবাজারে তিন দিন তাঁর মেয়ের চিকিৎসা চলে। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সকালে রোশনাকে প্রথমে শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের ডেঙ্গু ব্লকে ভর্তি করা হয়। একপর্যায়ে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। বিকেলে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়।
জুলেখা জানান, তাঁর পাঁচ সন্তানের মধ্যে রোশনা সবার ছোট। তিনি ও তাঁর স্বামী আজিজ উল্লাহ এই মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। মেয়ের অবস্থা যে খারাপ, তা তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসক।
জুলেখা বলেন, চিকিৎসক বলেছেন, মেয়ের অবস্থা ভালো না। এখন তাঁরা কী করবেন, বুঝতে পারছেন না।
রোশনার মতো আরেকটি রোহিঙ্গা শিশু ডেঙ্গু নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে চিকিৎসাধীন। শিশুটির বয়স ৩ মাস ২৫ দিন। নাম তসমিনা। রোহিঙ্গা শিশুটির পরিবারের বসবাস কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে।
তসমিনার গায়ে লাল লাল ফোসকাও উঠেছে। সেগুলো চুলকে দিচ্ছেন তার মা রমিদা বেগম। শিশুটি সারাক্ষণ কাঁদছে। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই শান্ত করা যাচ্ছে না। কী করলে তসমিনা স্বস্তি পাবে, কান্না থামবে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না মা রমিদা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, পাঁচ দিন আগে তীব্র জ্বরসহ তসমিনাকে এখানে ভর্তি করা হয়। এখানে ভর্তির আগে শিশুটি কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে তাকে এখানে পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে দুটি ইউনিট আছে। এই দুই ইউনিটের ডেঙ্গু ব্লকে গতকাল পর্যন্ত ২৮ জন শিশু ভর্তি ছিল।
ডেঙ্গু ব্লকে চিকিৎসাধীন শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তসমিনা। আর এখানে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে একমাত্র রোশনাই আইসিইউতে আছে।
ডেঙ্গু ব্লকে বসে তসমিনার মা রমিদা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ২০১৭ সালে মিয়ানমারের বুচিদং থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আসেন। একই সময় বুচিদং থেকে কক্সবাজারে আসেন জোবাইর। পরে কক্সবাজারের শিবিরে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের দুই বছর বয়সী একটি ছেলে আছে।
রমিদা জানান, তসমিনার জ্বর হলে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে তার চিকিৎসা করানো হয়। মেয়েকে নিয়ে পাঁচ দিন আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। মেয়ের জ্বরের সঙ্গে গায়ে চুলকানি হয়েছে। চিকিৎসক একটা পাউডারের মতো ওষুধ দিয়েছেন। কিন্তু ওষুধ দেওয়ার পরও চুলকানি যাচ্ছে না। ক্যাম্পের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা তসনিমার চিকিৎসা খরচ দিচ্ছে বলে জানান রমিদা।
হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরের পাশাপাশি শিশুটির অ্যালার্জি হয়েছে। ওষুধ দেওয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয় জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৮৮৯ জনের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৬ জন।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় জেলার বাইরের বাসিন্দারাও আছেন। সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, মারা যাওয়া ২৬ জনের মধ্যে ১৪ জন শিশু-কিশোর।