সদস্য না হয়েও তদন্ত কমিটির সাক্ষাৎকারে উপসচিবের থাকা নিয়ে প্রশ্ন

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডফাইল ছবি

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের সন্তানের ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য অবৈধভাবে আবেদন করা হয়েছিল। এ ঘটনার পর ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। আজ সোমবার কমিটির দুই সদস্য বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।

তবে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় বোর্ডের উপসচিব মো. বেলাল হোসেন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে উপস্থিত থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, তদন্ত কার্যক্রম প্রভাবিত করতে তিনি উপস্থিত ছিলেন।

আজ বোর্ডের চেয়ারম্যানের সম্মেলনকক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তিন সদস্যের কমিটির দুজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন মাউশির মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক মো. আমির হোসেন ও জ্যেষ্ঠ সিস্টেম অ্যানালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান। কমিটির মুখোমুখি হয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমানও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটির সঙ্গে কথা বলার সময় মো. বেলাল হোসেনও ছিলেন। এ ঘটনায় আমি বিব্রত। কারণ, উপসচিব ওই তদন্ত কমিটির সদস্য নন। কমিটির সদস্য হলে তাঁর সামনে কথা বলতে কোনো সমস্যা ছিল না।’

তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিয়েছেন উপপরিক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ দিদারুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি ডাকার পর তিনি সম্মেলনকক্ষে যান। এ সময় প্রবেশ করেন মো. বেলাল হোসেন। তাঁর সামনে কথা বলতে রাজি হইনি। পরে তিনি বের হয়ে যাওয়ার পর কমিটির সঙ্গে কথা বলেছি।’

আজ বিকেল চারটায় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের সম্মেলনকক্ষে গিয়ে দেখা যায়, কমিটির দুই সদস্যের সঙ্গে ভেতরে বসে ছিলেন মো. বেলাল হোসেন। গণমাধ্যমের আরও দুজন সংবাদকর্মী সেখানে ছিলেন। সাংবাদিকদের দেখে মো. বেলাল হোসেন সম্মেলনকক্ষের ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় চার কর্মচারীকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য সম্মেলনকক্ষে ঢোকানো হয়। জানতে চাইলে শিক্ষা বোর্ডের সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথ প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় মো. বেলাল হোসেনের থাকার বিষয়টি তিনিও শুনেছেন।

তদন্ত কমিটির সদস্য নন, তবু সাক্ষাৎকারে উপস্থিত থাকা নিয়ে চেয়ারম্যান রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির সদস্যদের সহযোগিতা করার জন্য গত রোববার চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে মো. বেলাল হোসেনও আছেন। মূলত তদন্ত কমিটির সদস্যদের গ্রহণ করা, থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য কমিটিটি গঠন করা হয়। এ কারণে মো. বেলাল হোসেন সহযোগিতা করেছেন। সহায়ক কমিটির সদস্য হয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় থাকাটা নৈতিক কি না, এ প্রশ্নে চেয়ারম্যান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উপসচিব মো. বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটিকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি কমিটির সদস্য। সহযোগিতা করার জন্য তাঁকে ডাকা হয়েছিল।

শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। পরবর্তীকালে কমিটির সদস্য খন্দকার আজিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় মাঝেমধ্যে সহযোগিতার জন্য মো. বেলাল হোসেন এসেছিলেন। তবে কাজ শেষে বের হয়ে যান। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান জানান, তাঁর সাক্ষাৎকার দেওয়ার পুরো সময়েই মো. বেলাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে মাউশি চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গাজী গোলাম মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, তিনিও কিছুদিন আগে শিক্ষা বোর্ডের একটি তদন্ত কমিটিতে যুক্ত ছিলেন। কমিটিতে মাউশির এক পরিচালকও ছিলেন। তখন গোপনীয়তা বজায় রেখেই বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষা বোর্ডের কোনো কর্মকর্তাকে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তাঁরা রাখেননি। কারণ, সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় বোর্ডের কাউকে সাক্ষী রাখা ঠিক নয়।