ছাত্রলীগের দাপটে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত: মহিলা পরিষদ

ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির দৃশ্য
ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের দাপটের কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের পরিস্থিতি বন্ধ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আজ শনিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলে। বিবৃতিতে সই করেন সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

মহিলা পরিষদের ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেত্রীদের বিরুদ্ধে তাঁদের সহকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেসব গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন, তার যথার্থ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানায়। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নারীর প্রতি হয়রানির অভিযোগ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছে।

ইডেন কলেজের ঘটনায় মহিলা পরিষদ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ  প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলে, সম্প্রতি ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সাংঘর্ষিক অবস্থানের কারণে ছাত্ররাজনীতির কলুষিত নগ্ন রূপটি সবার সামনে উন্মোচিত হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদে দেখা যাচ্ছে, ইডেন কলেজে ছাত্রসংগঠনের ক্ষমতার অপব্যবহার এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এখানেও ছাত্রসংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, আসন-বাণিজ্য ও প্রযুক্তির অপব্যবহার সাধারণ ছাত্রীদের অবস্থান সংকটময় করে তুলছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমাজে প্রচলিত নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ, যা একই সঙ্গে নারীর শিক্ষার সুযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব তৈরির আশঙ্কা তৈরি করে। ছাত্রলীগের দাপটের কারণে আজ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু প্রশাসনিক কার্যক্রমের অন্তরায় হয়ে উঠছে৷ এ ধরনের পরিস্থিতি বন্ধ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দলে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত থেকে শুরু করে ২৫ সেপ্টেম্বর দিনভর উত্তপ্ত ছিল ইডেন কলেজ ক্যাম্পাস। ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন ওরফে রীভা, সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় সেদিন রাতেই ইডেন কলেজ কমিটি স্থগিত ও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধীপক্ষের ১২ নেত্রীসহ ১৬ নেতা-কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। অস্থিরতার ঘটনায় ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

ইডেন কলেজে অস্থিরতা চলাকালে বহিষ্কৃত নেত্রী সামিয়া আক্তারসহ কয়েকজন অভিযোগ তোলেন, তামান্না ও রাজিয়া সাধারণ ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা গত মঙ্গলবার কলেজের ফটকে ‘অনৈতিক কাজে বাধ্য করার’ অভিযোগ তোলা ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন করেন।