সার্ক সাহিত্য পুরস্কার বঙ্গবন্ধুর লেখক সত্তার স্বীকৃতি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মরণোত্তর ‘সার্ক সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’ প্রাপ্তি উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বাঁ থেকে মোহিত কামাল, রামেন্দু মজুমদার, মফিদুল হক ও শ্যামল দত্ত
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি আত্মকথন তাঁর রাজনৈতিক দর্শন, স্বপ্ন ও জীবনাচরণের কথা তুলে ধরে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’—বঙ্গবন্ধুর লেখা এ তিনটি বইয়ের ‘সার্ক সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’ অর্জন বঙ্গবন্ধুর লেখক সত্তার স্বীকৃতি দিয়েছে। এ তিনটি বইয়ের তথ্য দেশে-বিদেশে প্রজন্মের মধ্যে আরও ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে দিতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর এ পুরস্কার অর্জন উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ফাউন্ডেশন অব সার্ক রাইটার্স অ্যান্ড লিটারেচার বাংলাদেশ চ্যাপ্টার আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

ফাউন্ডেশন অব সার্ক রাইটার্স অ্যান্ড লিটারেচার (ফসওয়াল) প্রথম মরণোত্তর ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে বিশেষ এই সাহিত্য পুরস্কার দেয়। এই পুরস্কারপ্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন ফসওয়ালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সদস্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। বক্তব্য দেন সংগঠনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আরেক সদস্য লেখক, গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সাহিত্যিক ও মনঃশিক্ষাবিদ মোহিত কামাল এবং ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

অলাভজনক সংগঠন ফসওয়াল আত্মপ্রকাশ করে ১৯৮৭ সালে। সংগঠনটি ‘সার্ক লিটারারি অ্যাওয়ার্ড (সার্ক সাহিত্য পুরস্কার)’ নামে পুরস্কার দেওয়া শুরু করে ২০০১ সালে। এর আগে বাংলাদেশ থেকে চারজন সাহিত্যিক এ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০১ সালে কবি শামসুর রাহমান, ২০১২ সালে লেখক ফখরুল আলম, ২০১৫ সালে সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং ২০১৯ সালে প্রয়াত শিক্ষাবিদ, লেখক, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এ পুরস্কার পান। এ ছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য রুবানা হক কবিতার জন্য ২০০৯ সালে ফসওয়ালের ‘সার্ক ইয়াং রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন।

করোনার কারণে তিন বছর বিরতির পর এবার আবার এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ফসওয়ালের প্রধান কার্যালয় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। গত ২৬ মার্চ নয়াদিল্লিতে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রামেন্দু মজুমদার, মফিদুল হক ও মোহিত কামাল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মরণোত্তর ‘সার্ক সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’ প্রাপ্তি উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় কথা বলছেন রামেন্দু মজুমদার
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

মফিদুল হক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এবার নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের সাহিত্যিকেরা এ পুরস্কার পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর পুরস্কার উদ্বোধনী পর্বে আলাদাভাবে দেওয়া হয়েছে। এ পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আবেদন করতে হয়নি। তবে বঙ্গবন্ধুর তিনটি বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ ফসওয়ালের সভাপতি অজিত কৌরের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া পুরস্কারের প্রশংসাবাণীতে লেখা হয়েছে, ‘শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, দেশের জনগণের কাছে তিনি বঙ্গবন্ধু, তিনি বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের জাতীয় মুক্তির একজন মহান ব্যক্তিত্বের প্রতীক। মহাত্মা গান্ধী ও মার্টিন লুথার কিংয়ের মতো তিনিও অন্ধকারের শক্তির দ্বারা নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন, কিন্তু পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাঁদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। তাঁর জীবনের একটি নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে যখন দীর্ঘদিন পর হারিয়ে যাওয়া তাঁর কারাগারের দিনলিপি ও নোটবুক খুঁজে পাওয়া যায় এবং পরবর্তী সময়ে তা প্রকাশিত হয়।

‘একটি রাজনৈতিক নথি হিসেবে এই গ্রন্থত্রয়ীর বিপুল মূল্য রয়েছে। যিনি ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন এবং দেশের মানুষকে স্বাধীনতার পথে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এমন একজন ব্যক্তির ভালোবাসা ও সহৃদয়তা নিয়ে লেখা আত্মকথন হিসেবেও এর মূল্য অপরিসীম। আত্মস্মৃতিত্রয়ীতে যে অসাধারণ সাহিত্যিক উৎকর্ষ প্রতিফলিত হয়েছে, সে জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান জানানোর সুযোগ পেয়ে ফাউন্ডেশন অব সার্ক রাইটার্স অ্যান্ড লিটারেচার গর্বিত।’  

সভায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর এ পুরস্কার অর্জন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তিনি লেখার ৫০ বছর পর তা বই আকারে প্রকাশ হয়েছে। অনেক লেখা হারিয়ে গিয়েছিল। বই আকারে প্রকাশের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নতুনভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছে মানুষ। বঙ্গবন্ধুকে পুরস্কার দিয়ে তাঁকে সাহিত্যিক হিসেবে মূল্যায়ন করেছে ফসওয়াল। সরকারের এখন দায়িত্ব বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি ও অর্জনকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া। তিনি বলেন, মুজিব কর্নারে পুরস্কারের প্রশংসাবাণী প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

সাহিত্যিক মোহিত কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর তিনটি বইয়ের মধ্যে তাঁর শিল্পীসত্তা, লেখকসত্তা, সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণের ক্ষমতা আবিষ্কৃত হয়েছে। তাঁর আত্মস্মৃতি ফসওয়াল সংগঠনটিকে স্পর্শ করেছে। সংগঠনটি বঙ্গবন্ধুর সাহিত্যিক সত্তাকে আবিষ্কার করেছে। এ পুরস্কারের মাধ্যমে লেখক শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বদরবারে সম্মানিত হয়েছেন।

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বঙ্গবন্ধুর তিনটি বইয়ে বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর স্বপ্ন, রাজনৈতিক দর্শন ও পরিবারের কথা উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধুকে আবিষ্কারের আরও নানা জায়গা রয়ে গেছে। তাঁর মতো সাহিত্যবোধ, জীবনবোধ ও সংস্কৃতিবোধ এখনকার রাজনীতিকদের মধ্যে অনুপস্থিত।

সঞ্চালকের বক্তব্যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাহিত্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। রাজনীতিবিদ ও নতুন প্রজন্মের এই বইগুলো পড়া উচিত। বঙ্গবন্ধু কখনো ভিন্নমতকে অশ্রদ্ধা করেননি।