জাকাতের অর্থ পৌঁছে যাচ্ছে প্রকৃত অসহায় মানুষের কাছে

অসহায় মানুষের পাশে সামর্থ্যবানদের দাঁড়ানোর উদ্যোগকে জাকাতের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করেছে ইসলাম। আর জাকাতের এই অর্থ অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটায়। প্রযুক্তির কল্যাণে সেই জাকাত আদায়ের ব্যবস্থা আরও সহজ হয়েছে। বিকাশ অ্যাপ দিয়ে খুব সহজে জাকাতের অর্থ পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে হাজারো অসহায় মানুষের কাছে।

সংবাদপত্রে অনুদানের আবেদন দেখে আন্দোলিত হয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে অনুদান দেওয়ার একটা ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে ভালো কাজে উৎসাহিত করার ফেসবুক কমিউনিটি ‘বিকশিত বাংলাদেশ’ পেজে।

ভিডিওটির নিচে এম এইচ হৃদয় নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ভিডিওটা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না! আমার এক আত্মীয় তাঁর ছেলের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য কী সংগ্রামই না করেছেন, তা মনে পড়ে গেল। বিকাশ অ্যাপ দিয়ে থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনে জাকাতের কিছু টাকা পাঠালাম। কী যে শান্তি লাগছে। অজানা একটা অসুস্থ বাচ্চার মুখে এক টুকরা হাসি লেগে থাকার ছবিটাতে আটকে আছি। এ এক ভালো লাগার মুহূর্ত। পাওয়ার মুহূর্ত।’

হৃদয়ের মতো এমন অনেক সামর্থ্যবানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তা যোগ্য গ্রহীতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে কিছু সামাজিক সংগঠন।
দাতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ এমনভাবে কাজে লাগানো হয়, যা মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। জাকাতের অর্থে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে নির্দিষ্ট কিছু কর্মসূচিতে যুক্ত করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা হয়। কর্মসূচিগুলো হচ্ছে জাকাত গ্রহীতার জন্য আয়বৃদ্ধিমূলক ব্যবস্থা, দরিদ্র বেকারদের কারিগরি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা ও পুষ্টি সহায়তা, অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, জরুরি মানবিক সহায়তা, দুস্থ নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং সচেতনতা সৃষ্টি ও সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধকরণসহ নানামুখী কার্যক্রম।

জাকাত নিয়ে কাজ করা এমন অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন।

থ্যালাসেমিয়া ও লিভারজনিত সমস্যাসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে চিকিৎসা ব্যয় বহন না করতে পেরে অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যান। অনেকেই নিঃস্ব হয়ে যান। নামমাত্র চিকিৎসা ব্যয়ে এমন জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অপর দিকে সুবিধাবঞ্চিত মা ও শিশুর অপুষ্টিজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে সেবা দিয়ে আসছে নানা সংস্থা। প্রতিবছর এমন দুই লাখের বেশি মা ও শিশুকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়ে আসছে আইসিডিডিআরবি।

বিভিন্ন দুর্যোগ ও অপারেশনে রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখা প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। তিন হাজারের বেশি রক্তদাতা, যাদের তালিকাভুক্ত রয়েছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো হচ্ছে তাসাউফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।

আর একই সঙ্গে একটি অ্যাপেই এই সবগুলো সামাজিক সংগঠনে গ্রাহক তাঁর জাকাতের অংশবিশেষ বা ইচ্ছামতো দিতে পারেন।

অনেকেই সময়–সুযোগের স্বল্পতায় মানবতার কল্যাণে এমন সব উদ্যোগের পাশে থাকতে পারেন না। বিকাশ অ্যাপ সেই গ্রাহকসহ সব গ্রাহকের জন্য এসব মহতী উদ্যোগের পাশে দাঁড়ানোকে সহজ করেছে। যেকোনো সম্মিলিত প্রচেষ্টার অলাভজনক উদ্যোগের পাশে চাইলে আপনিও পারেন জাকাতের অর্থ দান করতে।

অনুদান দিতে বিকাশ অ্যাপ বা বিকাশের ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘সার্ভিস’ মেন্যুটি নির্বাচন করুন। সেখানে থাকা কয়েকটি অপশনের মধ্যে একটি ‘ডোনেশান’। ডোনেশান অপশনে ঢুকলেই পেয়ে যাবেন অনেকগুলো সংস্থার নাম। অর্থসহায়তা পাঠানোর জন্য ভিজিট করতে হবে bkash.com/products-services/donation লিংকে।

উল্লেখ্য, জাকাত ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। সঞ্চিত স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থের পাশাপাশি বিভিন্ন দলিল, শেয়ার সার্টিফিকেট, প্রাইজবন্ড ও অন্যান্য কাগজপত্র যদি পূর্ণ এক বছর হাতে থাকে এবং পরিমাণে জাকাত প্রদানের উপযুক্ত হয়, তাহলে ইসলামি আইন অনুযায়ী জাকাত দেওয়া সামর্থ্যবানদের জন্য বাধ্যতামূলক। সংগঠিত ও পরিকল্পিত উপায়ে জাকাত প্রদান করলে তা হতে পারে দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম উপায়। সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে জাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং সুযোগের সমতার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক জাকাত ব্যবস্থাপনা অতীব প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে বিকাশের চিফ কমিউনিকেশনস অফিসার মাহফুজ সাদিক বলেন, যুগে যুগে জাকাতের অর্থে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে, স্বাবলম্বী হয়েছে পরিবার। বিকাশের ডোনেশান প্ল্যাটফর্ম একই সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে লাখো অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিচ্ছে, যা জাকাত ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখছে।