আগ্রাবাদের জাম্বুরি পার্কে বন্ধ ফোয়ারা, শৌচাগারে তালা, কমেছে দর্শনার্থী

প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আগ্রাবাদ এলাকায় জাম্বুরি মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে জাম্বুরি পার্ক।

পাঁচ মাস ধরে বন্ধ নগরের আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্কের ফোয়ারা। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণ হয়ে পড়েছে নানা স্থাপনা। গত ২৩ মে সকালেসৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদের জাম্বুরি পার্কে একসময় প্রায় হাজারখানেক দর্শনার্থী ছুটে আসতেন এখানে থাকা দুটি ফোয়ারার বর্ণিল আলোকসজ্জার প্রদর্শনী দেখতে। তবে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ সেই দুটি ফোয়ারা। ফোয়ারা ঘিরে থাকা জলাধারও ছিল পানিশূন্য। বৃষ্টিতে পানি কিছুটা জমলেও চালু হয়নি ফোয়ারা। এর ফলে ফিকে হয়ে এসেছে পার্কের সৌন্দর্য। ২০১৮ সালে উদ্বোধনের পর দিনে এক হাজারের বেশি লোকের সমাগম হলেও এখন তা অর্ধেকের কমে নেমে এসেছে।

পার্কে থাকা চারটি শৌচাগারের তিনটি এখন নষ্ট। দুটি শৌচাগার ব্লক ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্মাণ করা কক্ষের পেছনে আবর্জনার স্তূপ। দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় সন্ধ্যার পর পার্কের ফোয়ারা দুটিতে নানা রঙের আলোকসজ্জা প্রদর্শিত হতো, এখন তা বন্ধ। চলতি মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে পানিশূন্য হয়ে যায় অ্যামিবা আকৃতির জলাধারটি।

জানা গেছে, প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় জাম্বুরি মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে জাম্বুরি পার্ক। ২০১৬ সালে প্রায় ৮ দশমিক ৫৫ একর জায়গায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন পার্কের নির্মাণ শুরু করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পার্কে রয়েছে আট হাজার ফুট জগিং ট্র্যাক। পার্কের মাঝখানে রয়েছে ৫০ হাজার বর্গফুটের অ্যামিবা আকৃতির জলাধার। জলাধারের পাশে উন্মুক্ত বসার স্থান ও দীর্ঘ ওয়াকওয়ে। নিরাপত্তার জন্য ৪০টি সিসিটিভি ক্যামেরা, বসার জন্য শতাধিক বেঞ্চ এবং নারী-পুরুষের জন্য আলাদা শৌচাগার রয়েছে। জাম্বুরি পার্কটি বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগ-৪–এর অধীন। গণপূর্ত বিভাগ থেকে পার্কটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেসরকারি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

বন্ধ প্রবেশের ফটক, শৌচাগার

সরেজমিনে জাম্বুরি পার্কে গিয়ে পার্কের ছয়টি প্রবেশফটকের দুটি পুরোপুরি বন্ধ পাওয়া গেছে। পার্কের ২ ও ৫ নম্বর প্রবেশফটক দুটিতে তালা দেওয়া। এর বাইরে গাছের ডালপালা দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে প্রবেশপথ। পার্কে আসা লোকজন জানিয়েছেন, পার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাকি চারটি প্রবেশপথও সব সময় খোলা থাকে না। কখনো দুটি, আবার কখনো তিনটি খোলা থাকে।

পার্কের দুই কোনায় দুটি শৌচাগার ব্লক রয়েছে। যেখানে মোট চারটি শৌচাগার রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শৌচাগারে তালা দেওয়া। জানা গেছে, উদ্বোধনের পর কিছুদিন চালু ছিল এগুলো। এর পর থেকেই তালা দেওয়া। শৌচাগারে থাকা তালাগুলোতে মরচে ধরেছে। বর্তমানে একটি শৌচাগার চালু থাকলেও তাতে নারী-পুরুষের আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই।

পার্কের শৌচাগারে বাতিল জিনিসপত্র ও ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমেছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল আটটায়
ছবি: প্রথম আলো

বন্ধ থাকা শৌচাগারগুলোতে রাখা হয়েছে ব্যবহৃত রঙের কৌটা, পার্ক পরিষ্কারের সরঞ্জাম, ঘাস কাটার যন্ত্র, কর্মীদের পোশাকসহ বিভিন্ন অব্যবহৃত সরঞ্জাম। শৌচাগার ব্লকগুলোর সামনেও সিমেন্ট-বালুর বস্তা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। রাতের বেলা এসব শৌচাগারে আলোর ব্যবস্থাও তুলনামূলক কম। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা এবং বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে পার্ক।

পার্কে নিয়মিত আসা চাকরিজীবী জামাল হোসেন বলেন, সকালে এখন হাঁটতে ও ব্যায়াম করতে আসা লোকের সংখ্যা কম। সন্ধ্যায় আগে প্রচুর দর্শনার্থী আসতেন।

সন্ধ্যায় পার্কে এখন আগের মতো পরিবেশ নেই। জলাধারে পানি থাকলে এই গরমে মানুষ অন্তত একটু স্বস্তি পেত।

২৩ মে সকাল ৯টায় পার্কে থাকা রক্ষণাবেক্ষণের কক্ষটি বন্ধ পাওয়া যায়। গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, পার্কের রক্ষণাবেক্ষণকক্ষের জন্য আলাদা কোনো কর্মকর্তা নেই। বিভাগের কর্মকর্তারা গেলেই সেখানে বসেন। পার্ক পরিচালনার জন্য আরও জনবল প্রয়োজন বলে জানায় তারা।

পার্কের রক্ষণাবেক্ষণকক্ষটি খালি থাকার বিষয়ে গণপূর্ত উপবিভাগ-৯–এর প্রকৌশলী মো. আনিসুল হক বলেন, সিসিটিভি চেক করার জন্য আলাদা কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ করা নেই। পার্ক পরিচালনার জন্য যে চাহিদা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে, তার অর্ধেক জনবলও পাওয়া যায়নি।

‘রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত’

পার্কের ফোয়ারাগুলো নষ্ট নয়, সাময়িকভাবে বন্ধ বলে জানিয়েছেন পার্ক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার আবু ইউসুফ মো. বশীর। তিনি বলেন, জলাধারের নিচে পলিমাটি জমে গিয়েছিল। তাই সম্প্রতি সেটি পরিষ্কার করা হয়েছে। ফোয়ারাগুলো চালু আছে। জলাধারে রঙের কাজ প্রায় শেষ। বৃষ্টিতে জলাধারে অর্ধেকের বেশি পানি পূর্ণ হয়েছে।

পার্কের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম-৪) সানজিদা আফরিন প্রথম আলোকে বলেন, বাৎসরিক পরিষ্কারের জন্য জলাধার খালি ছিল। তবে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তাতে পানি জমেছে। শৌচাগারের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।

পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপটারের সভাপতি আশিক ইমরান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়গুলো চিন্তা করা হয় না। যেমন জাম্বুরিতে তিনটি শৌচাগার ব্লক নষ্ট পড়ে আছে। এর জন্য যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের দায়ও রয়েছে। নগরে সঠিক অর্থে পার্কের অভাব। তাই যেগুলো আছে, সেগুলোর পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত।